প্রশ্নকর্তা শেষও করতে পারেননি, ‘গরমটা কেমন…?’ কুশল মেন্ডিসের মুখে অপ্রীতি হাসি। কণ্ঠে তিক্ততা, ‘উফফ…আবহাওয়া একইরকম হলেও গরম শ্রীলঙ্কার চেয়ে বেশি। আর্দ্রতাও বেশি।’
জৈষ্ঠ্যের প্রথম দিনে তীব্র গরমে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। সাগরপাড়ে বয়ে যাচ্ছিল গরম বাতাস। সূর্যের সেই প্রখর রোদে টিকে থাকা ছিল বিশাল পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় রোববার সাত সকালে জহুর আহমেদে টস জিতে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে অর্ধেক কাজ এগিয়ে দিয়েছিলেন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রথম দিন শেষে তাদের মুখেই হাসি টিকেছে।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের দ্বাদশ সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার রান ৪ উইকেটে ২৫৮। গলদঘর্ম ম্যাথুজ দিন শেষে যখন সাজঘরে ফিরছিলেন তখন নামের পাশে ১১৪ রান ঝকঝক করছিল। আর তার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ ৯২ রানের জুটি গড়া কুশল মেন্ডিস করেছেন ৫৪। তাতে প্রথম দিনে অতিথিদের কিছুটা এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশকে খুব পিছিয়ে রাখার কারণ নেই। ‘পাটা উইকেটে’ নাঈমের দুটি ও সাকিব এবং তাইজুলের একটি করে উইকেট স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দেয় স্বাগতিক ড্রেসিংরুমে। যে পারফরম্যান্সে খুশি স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।
তিনি অবশ্য কাউকেই এগিয়ে রাখতে নারাজ, ‘টেস্টের প্রথম দিন বিবেচনায় আমাদের বোলাররা যেরকম করেছে তাতে আমি খুশি। আমি মনে করি আজ সমান-সমান পারফরম্যান্স হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে কিছু ক্রেডিট দেওয়া উচিত। বিশেষ করে ম্যাথুজ যেভাবে ব্যাটিং করেছে। তারা ভালো ব্যাটিং করেছে। আমরা ভালো বোলিং করেছি।’
সেঞ্চুরিয়ান ম্যাথুজের সামনে ছিল বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। শেষ ১২ ইনিংসে মাত্র এক ফিফটি পাওয়ায় কিছুটা চাপে ছিলেন সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক। একাদশের বাইরে প্রতিশ্রুতিশীল বেশ কয়েকজন দলে ঢোকার অপেক্ষায়। তাই বড় কিছু তাকে করতেই হতো। এরপর চট্টগ্রামের উটকো গরম! মধ্যাহ্ন বিরতির ৩০ মিনিট আগে যখন মাঠে আসেন তখন শ্রীলঙ্কার স্কোর ৬৬/২। মিরাজের ইনজুরিতে দলে সুযোগ পাওয়া নাঈমের ছোবলে ততক্ষণে সাজঘরে দিমুথ করুণারত্নে (৯) ও ওশাদা ফার্নান্দো (৩৬)। নিজের প্রথম ওভারে লঙ্কান অধিনায়নকে এলবিডব্লিউ করানোর পর ফার্নান্দোকে কট বিহাইন্ড করান।
ম্যাথুজের সামনে তখন দলের হাল ধরার পরীক্ষা। যেখানে খুব সহজেই উতরে যান। উইকেটে থিতু হয়ে চারিপাশে শট খেলে চাপ কমান। স্কোরবোর্ডও তখন এগিয়ে যায়। ১১১ বলে ৯০ মিনিটে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ফিফটিতে পৌঁছান। এরপর ৮১তম ওভারে শরিফুলের বল অন ড্রাইভে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে তুলে নেন সেঞ্চুরি। ৩০৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৮৩ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় পেয়ে যান দ্বাদশ সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে ৯২ রানের জুটি গড়া কুশল নিজের উইকেট উপহার দেন চা-বিরতির পর প্রথম বলে। তাইজুল ইসলামের বলে আলগা শটে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন।
বাংলাদেশের বোলিংয়ে নজর ছিল সাকিব আল হাসানের দিকে। তবে মুমিনুল প্রথম সেশনে তাকে বোলিংয়েই আনেননি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ৩৬তম ওভারে বাঁহাতি স্পিনার আক্রমণে আসেন। টানা ১০ ওভারে তার বোলিং ছিল মিতব্যয়ী। ৫ মেডেনে রান দেন ৯। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরেন ৬৬তম ওভারে। এ স্পেলে পেয়ে যান সাফল্য। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা তার হাওয়ায় ভাসানো বল ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। সেখানে দারুণ ক্যাচ নেন জয়। দ্বিতীয় স্পেলে ৬ ওভারে ১ মেডেনে ১৩ রানে তার প্রাপ্তি ১ উইকেট। পড়ন্ত বিকেলে ফিরে ৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে আরও ১ মেডেন ওভার পেয়েছেন। রান দিয়েছেন ৫। তার বোলিং ছিল বেশ নিয়ন্ত্রিত।
কোভিড থেকে সেরে উঠার পর বোলিং অনুশীলন করতে পারেননি। তাইতো আজকের বোলিংয়ে তেমন জোর দেননি। ধীর গতিতে স্পট বোলিংয়ে ছিল তার নজর। ব্যাটসম্যানকে সামনে এনে খেলাতে বাধ্য করেছেন। তাতে খুব বেশি রান তার বোলিংয়ে নিতে পারেননি লঙ্কানরা। সব মিলিয়ে ১৯ ওভারে ৭ মেডেনে ২৭ রান দিয়েছেন। ইকোনমি ছিল ১.৪২, যা ছিল দলের সেরা।
প্রথম দিন বাংলাদেশ কেবল পিছিয়ে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ানো রিভিউয়ে। প্রথম ২৩ ওভারেই শেষ ৩ রিভিউয়ের ২টি! দুটিই শরিফুলের বোলিংয়ে। তার নির্বুদ্ধিতায়। আর সেঞ্চুরিয়ান ম্যাথুজ ৩৮ রানে তাইজুলের বলে কট বিহাইন্ড আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চট্টগ্রামের ২২ গজ রাঙিয়ে মুখ ভর্তি চওড়া হাসি নিয়ে দিন শেষ করেছেন। সঙ্গী চান্দিমাল অপরাজিত ৩৪ রানে। তাদের থামানো উত্তর জানা আছে তো সাকিবদের?