ক্রিকেট সিরিজটা বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার। শুরু হচ্ছে ১৫ মে থেকে। কিন্তু দু’দল ছাপিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনায় শুধু দুই ক্রিকেটার; মোস্তাফিজুর রহমান ও মুশফিকুর রহিম।
মোস্তাফিজুর কেন টেস্ট খেলতে চাইছেন না— এই প্রশ্নে বিসিবি জেরবার। আর মুশফিক কেন এখনো টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলছেন না— এনিয়েও দারুণ আপত্তি বিসিবির!
কোন ক্রিকেটার কোন ফরমেটের ক্রিকেট খেলতে আগ্রহী— বিসিবির যোগান দেওয়া সেই পছন্দের একটি ফরমে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সই-স্বাক্ষর করে ক্রিকেট বোর্ডের চাকুরে হয়েছেন। সেই ফাইল জানাচ্ছে, মোস্তাফিজ টেস্ট ক্রিকেট খেলার ঘরে ‘ক্রস চিহ্ন’ দিয়েই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। বিসিবিও তাকে টেস্ট দলের সঙ্গে চুক্তিতে রাখেনি। সেই অনুযায়ী তার বেতন গ্রেড ঠিক হয়েছে।
মোস্তাফিজকে ছাড়াই বাংলাদেশ সম্প্রতি টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। বড় কোনো সমস্যা হয়নি। টেস্টে মোস্তাফিজের জায়গায় নতুন জোরে বোলার খেলাচ্ছে বাংলাদেশ। তারাও পারফর্ম করছেন বেশ। সমস্যা হয়েছে, যখন দলের সেই নতুন-পুরনো বোলারদের বেশ কয়েকজন একসঙ্গে ইনজুরিতে পড়েছেন। তখন বিসিবির মনে হয়েছে, টেস্টে তো মোস্তাফিজকে দিয়ে এই শূন্যস্থান পূরণ হতে পারে। কিন্তু মোস্তাফিজ পাঁচ দিনের ক্রিকেটের ভার-ভর কোনোটাই শরীরে নিতে রাজি নন এখন। ওয়ানডে এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টির জন্যই নিজেকে তরতাজা রাখতে চান পুরো বছরজুড়ে।
মোস্তাফিজের কাছ থেকে বিসিবি পছন্দ চেয়েছিল। মোস্তাফিজও নিজের পছন্দ জানিয়েছেন। বিসিবি এতদিন সেটা মেনেও নিয়েছে। কিন্তু এখন হঠাৎ করে বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে মনে হচ্ছে, টেস্টে না খেলে মোস্তাফিজ দেশের প্রতি যথেচ্ছ কমিটমেন্ট দেখাচ্ছেন না। বরং টাকার প্রতি মায়া-ভালবাসায় বেশি আছড়ে পড়ছেন তিনি।
টেস্টের প্রতি মোস্তাফিজের ‘না’ এবং ‘ক্রস চিহ্ন’কে তো বিসিবি মেনেই তার সঙ্গে চুক্তি করেছিল। তখন তো কোনো উচ্চবাচ্য করেননি বিসিবি’র কেউ। তবে এখন করছেন। তার কারণ একটাই- বিসিবি’র রেটিনায় দূরদৃষ্টির পাওয়ার কম। অনেক কম।
মোস্তাফিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন ৭ বছর হলো। পেছনের এই সময়ের মধ্যে মোস্তাফিজ মানের আরেকটা বোলার কেন তৈরি করা সম্ভব হলো না— সেই প্রশ্ন কি কখনো নিজেকে করেছেন বিসিবির পরিচালক স্যাররা?
৯ মে মুশফিকের ৩৫তম জন্মদিন ছিল। পরিবার থেকে দূরে দলের সঙ্গে চট্টগ্রামে এখন ক্রিকেট নিয়ে সময় কাটছে তার। ফেসবুকে ‘পরিবার সংহতির’ ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে মুশফিকের হ্যাপি বার্থডের আনন্দ-উৎসব ও শুভেচ্ছা ম্যাসেজের চালাচালি শুরু ৯ মে’র প্রথম প্রহর থেকেই। আর জন্মদিনের এই উৎসবের মুহূর্তে তাকে শুনতে হলো বিসিবি বলছে— রাস্তা মাপো সিনিয়র!
সাংবাদিকদের ভিড়ে ৮ মে দুপুরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যা বললেন তাতে এটা পরিষ্কার, সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে বিসিবির পরিকল্পনায় থাকছে না মুশফিক রহিমের নাম। দলের সব সিনিয়র খেলোয়াড় সব ফরমেটে খেলুক, সেটাও বিসিবি চায় না। তাই বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে আপাতত থাকুন সিনিয়ররা। টি-টোয়েন্টি হোক তারুণ্য শক্তির।
পাপন ঠিক যা বলেছিলেন সেদিন, ‘আমাদের এই প্লেয়ারগুলোকে (সিনিয়র) আমরা চাই না তারা মন খারাপ করে যাক। আমরা চাই তারা হাসিমুখে যাক। নিজেরা সিদ্ধান্ত নিক। যত তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ততই ভালো। কিন্তু একটা সময় তো আসবে যদি সিদ্ধান্ত না নেয়, তখন আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
এই সিনিয়র কারা? সেটাও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সিনিয়রদের মধ্যে মাহমুদউল্লাহ টেস্ট খেলেন না, তিনি টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। তার অধিনায়কত্বে বিসিবি সন্তুষ্ট। তামিম টি-টোয়েন্টি খেলেন না, তিনি ওয়ানডে অধিনায়ক আর টেস্টের ওপেনার। আরেক সিনিয়র সাকিব তিন ফরমেটেই খেলেন। কিন্তু তিনি সিরিজ শুরুর সময় হলে মাঝে-সাঝে কোনোটা-ই আবার খেলেন না! বাকি রইলেন শেষ সিনিয়র মুশফিকুর রহিম। তিনি সব ফরমেটেই খেলেন। তবে এটা স্পষ্ট বিসিবি তাকে আর টি-টোয়েন্টি দলের পরিকল্পনায় রাখতে চায় না। মুশফিক নিজেই সরে দাঁড়ালে বিসিবি হয়তো তার জন্য বিদায়ী মানপত্র তৈরি করবে। নয়তো নিশ্চিত থাকুন, সামনের জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি দলে মুশফিকের নামের পাশে লালকালির ক্রস চিহ্ন বসছে; দ্য এন্ড!
মুশফিক এখন বলতেই পারেন, প্রথমে তারা আমার কিপিং গ্লাভস কাড়লো। তারপর ব্যাটিংয়ের জায়গা নড়িয়ে দিল। এখন বলছে দল থেকেই সরে যাও!