সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। প্রোটিয়াদের মাটিতে কেশভ মহারাজের আউটের মাধ্যমেই দীর্ঘদিনের অধরা জয় চলে এলো টাইগারদের হাতের মুঠোয়।
ক্রিকেট ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা ১৪ ওয়ানডের কোনোটিতেই জয় পায়নি বাংলাদেশ দল। তবে শুক্রবার টাইগারদের ৩১৪ রানের টার্গেট টপকাতে নেমে ২৭৬ রানে থেমে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। এতে ৩৮ রানের জয়ের সঙ্গে আইসিসি সুপার লিগের গুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্ট পেল টাইগাররা।
এর আগে, সবশেষ সিরিজে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে স্বাগতিক প্রোটিয়ারা। ৩ ম্যাচ সিরিজ জেতে ৩-০ ব্যবধানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজেও ফেভারিট দলটির নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে ৩১৩ রানের বিশাল সংগ্রহ জমা করে বাংলাদেশ দল।
শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে ম্যাচটি শুরু হয়। ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের সাবধানী ব্যাটিংয়ে ৪৬ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশ। এর আগে ৯ ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ ছিল ৪৬ রান। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে কিপারের মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে চার মেরে ৪৬ থেকে টপকে ৫০ রানে নিয়ে যান তামিম।
অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে সুইং করে ভেতরে ঢোকা বল লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন তামিম। ব্যাটে খেলতে পারেননি। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে নেন রিভিউ। তবে কোনো কাজ হয়নি, বল লাগতো মিডল স্টাম্পে। ভাঙে ১৩০ বল স্থায়ী ৯৫ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিাকায় ওয়ানডে এটাই বাংলাদেশের সেরা জুটি। আগের সেরা ছিল ২০১৭ সালে তৃতীয় উইকেটে ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিমের ৯৩।
ছন্দে থাকা লিটন দাস বড় করতে পারলেন না শুরুটা। তামিম ইকবালের মতো আরেকটি নিচু হওয়া বলে বোল্ড হয়ে গেলেন ডানহাতি এ ওপেনার।
আগের বলে দুই রান নিয়ে ফিফটিতে যান লিটন। পরের বল সরে গিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল নিচু হয়ে যাওয়ায় ব্যাটে খেলতে পারেননি। হয়ে যান বোল্ড। ৬৭ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫০ রান করেন লিটন। এরপর ক্যাচে দিয়ে ফিরলেন মুশফিকুর রহিমও। প্রিয় শট ঠিক মতো খেলতে পারলেন না এ ব্যাটার। স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে করে ফেললেন গড়বড়। ব্যাটের উপরের কানায় লেগে উঠে গেল সহজ ক্যাচ। বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজের বলে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন মুশফিক। এক চারে ১২ বলে তিনি করেন ৯ রান।
এ সফরে থাকার কথা ছিল না সাকিব আল হাসানের। তারপরও প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ে নেমে পায়ের পেশিতে টান পড়তেও দেখা যায় তার। তাও দারুণ ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ‘ফিফটির ফিফটি’। ছক্কা হাঁকিয়েই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫০তম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাকিব। ইয়াসির রাব্বিকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন তিনি।
এ ম্যাচেই তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ৯৫ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সেরা জুটি। সেটাকে দুইয়ে নামিয়ে দেশকে প্রথম শতরানের জুটি এনে দেন সাকিব আল হাসান ও ইয়াসির আলি চৌধুরি, সেটাও কেবল ৭২ বলে।
লুঙ্গি এনগিডির নিচু ফুলটস বল স্কুপ করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাকিব আল হাসান। রিভিউ নেননি তিনি। ভাঙে ৮২ বল স্থায়ী ১১৫ রানের জুটি। শত রানের জুটি ভেঙে সাকিব আল হাসানের বিদায়ের এক বল পর ফিরে গেলেন ইয়াসির আলি চৌধুরীও। লিটনের মতো এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানও বিদায় নেন পঞ্চাশ ছুঁয়েই।
কাগিসো রাবাদাকে পুল করে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন ইয়াসির। টাইমিং করতে পারেননি, সহজ ফিরতি ক্যাচ নেন বোলার।
এরপর স্কয়ার লেগে ১৭ রান করে ধরা পড়েন আফিফ। পুল করে চমৎকার ছক্কা মারার পর বেরিয়ে এসে অফে তুলে মারতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। মার্কো ইয়ানসেনের স্লোয়ার বলে টাইমিং করতে পারেননি তিনি। ধরা পড়েন পয়েন্টে। ২৫ রান করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ এরপর ওভার শেষ হওয়া ৩১৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের আগের সেরা ইনিংস ছিল ৭ উইকেটে ২৭৮ রাজ। ২০১৭ সালের সফরে প্রথম ওয়ানডেতে ওই রান করেও হেরেছিল ১০ উইকেটে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩১৪/৭ (তামিম ৪১, লিটন ৫০, সাকিব ৭৭, মুশফিক ৯, ইয়াসির ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২৫, আফিফ ১৭, মিরাজ ১৯*, তাসকিন ৭*; এনগিডি ১০-১-৭৫-১, রাবাদা ১০-০-৫৭-১, ইয়াসেন ১০-১-৫৭-২, মহারাজ ১০-০-৫৬-২, ফেলুকওয়ায়ো ১০-১-৬৩-১)।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। জয় আছে চারটিতে, হার ১৭টিতে। চারটি জয়ের প্রথমটি এসেছিলো ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে। পরের দু’টি ২০১৫ সালে।ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিলো টাইগাররা। আর সর্বশেষ জয়টি ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। যেটি হয়েছিলো ইংল্যান্ডে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয় ছিল না। আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে ক্রিকেট ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।