১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক মাহেন্দ্রক্ষণ পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১২ জানুয়ারি শপথ নেন এই মহানায়ক। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সব থেকে স্মরণীয় দিন। এ দিনে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল ম্যাচ উদ্বোধন ও মাঠে বসে পুরো খেলা উপভোগ করেন জাতির পিতা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সচল করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ গঠন করেন (এই বিল ১৯৭৪ সালের ৩০ জুলাই সংসদে পাস হয়) বঙ্গবন্ধু। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক কাজী আনিসুর রহমানকে।
১৯৭২ সালের আজকের দিনে ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে) তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উভয়েই মাঠে উপস্থিত থেকে সাদা পায়রা উড়িয়ে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ফুটবল ম্যাচ উদ্বোধন করেছিলেন।
স্বাধীন বাংলা দলের ফুটবলারদের নিয়ে গড়া প্রধানমন্ত্রী একাদশ ও বাছাই করা খেলোয়াড় নিয়ে গড়া রাষ্ট্রপতি একাদশ মধ্যকার প্রদর্শনী ম্যাচটি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উভয়েই উপভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলও খেলা দেখতে এসেছিল। বঙ্গবন্ধু খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন।
খেলায় রাষ্ট্রপতি একাদশ ২-০ গোলে (আব্দুল গফুর ও গোলাম সারওয়ার টিপু) প্রধানমন্ত্রী একাদশকে পরাজিত করে। বিজয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন কিউ এম রফিক উদ্দিন দিপু এবং বিজেতা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু। সেদিন বঙ্গবন্ধু জনৈক খেলোয়াড়ের ব্যাক পাস দিয়ে গোল করার পদ্ধতি দেখে বলে উঠেছিলেন, ‘সবাই তো আর হাফেজ রশীদ নন’।
সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের ৫০ বছর পূর্ণ হলো আজ। কাকতালীয়ভাবে ৫০ বছর আগের ১৩ ফেব্রুয়ারি ছিল রোববার, আজও সেই রোববার।
প্রধানমন্ত্রী একাদশের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু বলছিলেন, সেদিন অন্য রকম এক অনুভূতি হয়েছিল। ম্যাচের আগে আমরা দুই দল সারি বেঁধে দাঁড়ালাম। বঙ্গবন্ধু আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছিলেন। হ্যান্ডশেকের সেই ছবিটা বাসায় বাঁধাই করে রেখেছি।
সেই ম্যাচের দুই একাদশ-
রাষ্ট্রপতি একাদশ:
শহিদুর রহমান সান্টু, বড় নাজির (জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা), জহিরুল হক, এরশাদুর রহমান, মনোয়ার হোসেন নান্নু (ভুট্টো), জিল্লুর রহমান, কাজী আবদুর রফিক (অধিনায়ক) (কাজী সাত্তার), সলিমুল্লাহ, সরফুদ্দিন আহমেদ, আবদুল গফুর, গোলাম সারোয়ার টিপু (সহ–অধিনায়ক) (ওয়াজেদ গাজী)।
অতিরিক্ত:
আবুল কাসেম, সালেহ আহম্মদ, পিয়ার আলী, বদরুল হুদা বাটু, বেলাল মিয়া, আবদুল আলিম, মোহাম্মদ মালা। কোচ: শেখ সাহেব আলী।
ম্যানেজার: শহিদ উদ্দিন ইসকান্দার।
প্রধানমন্ত্রী একাদশ:
অনিরুদ্ধ (সহ-অধিনায়ক), আইনুল হক, জাকারিয়া পিন্টু (অধিনায়ক), শেখ আশরাফ আলী, আবদুল হাকিম, আলী ইমাম, ফজলে সাদাইন খোকন (মোহাম্মদ কায়কোবাদ), শাহজাহান, কাজী সালাউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান, তসলিম উদ্দিন (নওশেরুজ্জামান)।
অতিরিক্ত:
আবদুল মোমেন, আবদুস সাত্তার, নিহার রঞ্জন গুহ, সিরাজুদ্দিন সিরু, গোবিন্দ কুণ্ডু, সাইদুর রহমান প্যাটেল, বিমল চন্দ্র, মাহমুদ, আমিনুল ইসলাম সুরুজ, সুভাষ। কোচ: ননী বসাক।