সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২৩ মে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর আরো এক সপ্তাহ বাড়তে পারে লকডাউন। তবে করোনা সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও লকডাউনের পর অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি রেডিও এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হবে। পাশাপাশি অনলাইন পাঠদান অব্যাহত রাখা হবে।
গত বছরের মার্চ থেকে আগামী ২২ মে পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না গেলে বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রম চলবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, করোনার সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দেয়া হবে। এরপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্লাসও শুরু হবে। এছাড়া লকডাউনের কারণে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া বন্ধ রয়েছে। লকডাউনের পরই অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু করা হবে।
বিগত সময়ের অ্যাসাইনমেন্ট কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্যায়নের বিষয়ে মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট আগে যা জমা রয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। এসব অ্যাসাইনমেন্ট যাচাই-বাছাইয়ে আমরা একটা ধারণা পাবো। তা থেকে নতুন করে নির্দেশনা প্রয়োজনে দিতে পারবো। এছাড়া আমরা ডাটা সংগ্রহ করছি। কোন শিক্ষার্থীর কী সমস্যা তা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন ফল অর্জনে যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে তা পূরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি শিগগিরই অনুকূলে আসার সম্ভাবনা না থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে এমন প্রতিটি বিদ্যালয়কেই অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে পরবর্তী দুই সপ্তাহ পর এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে দুই পরীক্ষাই নেয়া হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আগামী ২২ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সেই হিসাবে আগামী ২৩ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এর বিস্তার রোধে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আগামী তিন মাসের আগে হয়তো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে না।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর একই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় বাড়ানো হয় এর মেয়াদ। সর্বশেষ চলতি বছরের ২২ মে পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়।