২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হলে ২০০৯ সালে পিলখানা বিডিআর সদর দফতরের হত্যাকাণ্ডের দায়ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বর্তায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় খালেদা জিয়ার। তাহলে আমিও বলি, ২০০৯ সালে পিলখানা বিডিআর সদর দফতরের হত্যাকাণ্ডের দায়ও বর্তায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। কারণ তিনি তখন সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন।’
২৩ আগস্ট রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘২১ আগস্ট সংক্রান্ত মামলায় ৬ বার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ঘরের ছেলে কাহার আকন্দকে অবসর থেকে ডেকে নিয়ে এসে এই মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল মঈনুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সময়ও তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২১ আগস্ট বোমা হামলার মামলাকে রাজনীতিকীকরণ করেছে। এই ঘটনায় স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা যায়, আওয়ামী সরকার প্রকৃত কুশী-লবদের আড়াল করতে চেয়েছে। প্রকৃত সত্যকে ঢাকতে চেয়েছে।’
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘যারা গ্রেনেড হামলা করেছে তারা আওয়ামী লীগেরই দোসর। বোমা হামলার ঘটনা ও পরবর্তীতে আওয়ামী প্রভাবিত মামলার কার্যক্রমে সেটাই প্রমাণিত হয়। এ কারণেই তারা ‘ক্যালকুলেটেড’ বোমা হামলা করেছে। তাদের সমর্থক দেশি-বিদেশি এজেন্টরাই এ ভয়াবহ হামলার সাথে জড়িত বলে জনগণ বিশ্বাস করে। উদ্দেশ্য ছিল, আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের সহানুভূতি সৃষ্টি করা এবং বিএনপি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা।’
ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা কলে রিজভী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণভিত্তি হারিয়ে ১০৫ ডিগ্রি জ্বরে ভোগা রোগীর মতো এখন প্রলাপ বকছে। এবারে তাদের আমলে শুরু থেকেই বাংলাদেশের সর্বত্র রক্তগঙ্গা বয়ে যাচ্ছে। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান ছবিটা যেন শুধুই গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের। মানবিক বাংলাদেশের সেই চিরচেনা ছবিটা মুছে দিয়েছে বর্তমান সরকার।’
‘সারা দেশকে চুষে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার এখন বিএনপিসহ বিরোধী দলকে চিরস্থায়ীভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অমানবিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে’- অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়া দেশের কথা যেন কেউ জানতে না পারে। অর্থবছরের শুরুতেই গত ৪৩ দিনে ১১ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। এতেই প্রমাণিত হয় সরকারের রাজকোষ শূন্য হয়ে গেছে। রাজস্ব আহরণ কমে গেছে। রেমিট্যান্স আসা বিপুল পরিমাণে হ্রাস গেছে। মেগা প্রজেক্টসহ তথাকথিত উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিদেশে পাচার করেছে।’
অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় টাকা পাচারকারী একেকজন আওয়ামী নেতার ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। পাপুলের পর ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পুলিশ মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় তাদের আরেকজন সহযোগী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীমসহ আওয়ামী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের টাকা পাচারের কাহিনি আরব্য উপন্যাসকেও হার মানায়। জেলা পর্যায়ের ছাত্রনেতারা যদি হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর লোকেরা কত টাকার সমুদ্রে ভাসছেন সেটাই এখন জানার বাকি। জনগণের অর্থকে কীভাবে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী লোপাট করেছে তার নতুন নতুন লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসছে। এ সমস্ত অজানা লুটপাটের কাহিনি বেরিয়ে আসতে শুরু করায় আওয়ামী সরকার এখন দিশেহারা। সেজন্যই আকস্মিকভাবে জিয়া পরিবার ও বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট কাহিনি প্রচারে একযোগে নেমে পড়েছেন- প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।’