লালমনিরহাট-ফুলবাড়ী সড়কে কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজে ধীরগতি হওয়ায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। রত্নাই নদীর ওপর সেতুটির সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। এই দুই কারণে রত্নাই সেতুর নির্মাণ কাজ অনেকটা কচ্ছপ গতিতে চলছে। ফলে ফুলবাড়ী ধরলা সেতু উদ্বোধনের ৬ বছরও কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের লোকজন সহ ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি সুফল থেকে বঞ্চিত। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জুন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফুলবাড়ী ধরলা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। সেদিন থেকে সাধারণ মানুষ চলাচল শুরু করেন এবং সাথে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু পণ্য পরিবহনের জন্য ভারি যানবাহন ও ঢাকাগামী নাইট কোচসহ বড় ধরণের যাত্রীবাহী কোন যানবাহন আজও চলাচল করতে পারছে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র অধীন ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৮ মিটার প্রস্থের এই ফুলবাড়ী ধরলা সেতুটির নির্মাণ ব্যয় করা হয়েছে ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ধরলা সেতুর সার্বিক ব্যবহার এবং সুফলতা নিশ্চিত করতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর নতুন একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সেতুটি নির্মিত কাজ ধীরগতিতে চলছে। ফলে লালমনিরহাটের কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর ভগ্ন বেইলী ব্রিজের কারণে ধরলা সেতুর সুফল পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। ফলে ফুলবাড়ী ধরলা সেতুটির উদ্বোধনের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল এখনো বঞ্চিত স্থানীয়রা। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী এবং ভুরুঙ্গামরী উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিক সফলতার দ্বার উন্মোচন করতে পারেনি এই সেতুটি। লালমনিরহাট শহরের সাথে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সংযোগকারী সেতুটি দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে দাবি জানিয়েছেন দুই জেলার হাজারও মানুষ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলবাড়ী ধরলা সেতু মাত্র থেকে ১ কিলোমিটার দুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর ওপর বেইলী ব্রিজটি। ছোট এই বেইলী ব্রিজটির ভগ্নদশা হওয়ায় এটির ওপর দিয়ে কোন রকমেই হালকা যানবাহনসহ দুই জেলার হাজারও মানুষ চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন। সেতুটি নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ফুলবাড়ী থেকে ঢাকাগামী নাইটকোচ ও পণ্য পরিবহনের জন্য বড় ধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারছেন না। তাই ব্যবসায়িক ভাবে পিছিয়ে পড়েছেন এই চার ফুলবাড়ী- লালমনিরহাট, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রত্নাই নদীর ওপর ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্যে ও ১০ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ২০২৫ সালের ১৮ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার চুক্তি রয়েছে। এ পর্যন্ত সেতুটির ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে। সেতুটির উভয় পার্শ্বে সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ। সেতুটির নির্মাণকাজ করছে কংক্রিট এন্ড স্টীল টেকনোলোজি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম ও একরামুল হক জানান, দেখতে দেখতে ধরলা সেতু উদ্বোধনের ৬ বছর হয়ে গেল। কিন্তু পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট উপজেলার কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর সেতুর কাজ আজও শেষ হয়নি। আমরা ফুলবাড়ীবাসী রত্নাই নদীর ওপর জরাজীর্ণ বেইলি ব্রিজ দিয়ে কোন রকমেই ছোট ছোট ট্রাক ও পিকাপ দিয়ে অল্প অল্প করে দোকানের মালামাল আনছি। জানি না আরও কত বছর অপেক্ষা করতে হবে। সুনীল চন্দ্র রায় ও আমিনুল ইসলাম বলেন, লালমনিরহাটের কুলাঘাটে রত্নাই নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখনও রত্নাই নদীর ওপর পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ ব্যবহার করছি। বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে শুধু হালকা যানবাহন চলাচল করতে পারছে। এ সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচল করতে না পারায় মালামাল পরিবহন করা যাচ্ছে না। এ কারণে লালমনিরহাট শহরের সাথে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম চলছে মন্থর গতিতে। ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার ও এমদাদুল হক জানান, রত্নাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় আমরা ঠিকঠাক ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছি না। ট্রাকের পরিবর্তে ইজিবাইক ও ট্রলিতে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এ কারণে আমাদেরকে অতিরিক্ত পরিবহনভাড়া ব্যয় করতে হচ্ছে।’ “সেতুটির নির্মাণকাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হতে আরও কতদিন লাগবে আমরা বুঝতে পারছি না বলে জানান। এদিকে রত্নাই নদীর ওপর সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে লালমনিরহাটের সাথে কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার লাভ করবে। এ সব উপজেলার মানুষজনের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি আসবে। এতে স্থানীয়দের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে জানান ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল মোমেন জানান সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় সেতুর নির্মানকাজ স্থবির হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের জন্য ২ কোটি ৯০ লাখ টাকার অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত জমির মালিকদের টাকা বুঝে দেওয়া হবে। ২০২৫ সালের মধ্যেই সেতুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে এটি যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।