দেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমিখ্যাত সাগর মোহনার সবুজ জনপদ চরফ্যাশনের কুকরি-মুকরি এখন পর্যটকদের পদাচরণায় মুখরিত। শীতের আগমনীবার্তা’র সঙ্গে সঙ্গে এখানে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা সবার দৃষ্টি কারছে। তবে অন্যসময়ের চেয়ে এবার এখানে পর্যটকদের আগমন কিছুটা কম হলেও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অতিথিদের আগমনও বেড়ে যাবে এমন প্রত্যাশা করছেন কুকরীর পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দেশের দূর থেকে আসা পর্যটকরা এখানে এসে মেতে উঠছেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। প্রশান্তিময় সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। এখানকার প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করে তা ক্যামেরা বন্দি করছেন তারা। সম্প্রতি যোগাযোগ ব্যবস্থা ও থাকা খাওয়ার জন্য উন্নত রিসোর্ট গড়ে উঠায় মুকরীর জনপদ দিন দিন আরও দর্শনীয় স্পটে পরিণত হচ্ছে। ভোলা বনবিভাগ বলছে, দর্শনীয় এ স্পটটির সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন করে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষা দৃষ্টিনন্দন সবুজের দ্বীপ কুকরি-মুকরি প্রকৃতিকগতভাবেই যেন গড়ে উঠেছে সবুজ বেষ্টিত এক অরণ্য সৌন্দর্যে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার শীত মৌসুমেও এখানে পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। তবে এবার পর্যটক কিছুটা কম হলেও আগত ভ্রমণ পিপাসুদের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো দ্বীপ। কুকরি-মুকরির দর্শনীয় স্পটগুলোর মধ্যে ইকোপার্ক, নারিকেল বাগান, কুকরি বীচ, ঝুলন্ত সেতু ও মাকড়শার জাল দেখতে ভুল করছেন না কেউ। দূর থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা দর্শনীয় এসব স্পট দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম,কন্ঠ শিল্পী জিয়াউর রহমান, ও গৃহিণী সায়লা,এখানে ঘুরতে এসে নিজেদের অনুভূতি জানিয়ে বলেন,রাজধানীর কোলাহলমুখর পরিবেশ থেকে একটু উষ্ণতা, একটু প্রশান্তি পেতে ছুটে এসছি প্রকৃতির এ মায়াবনে। সবুজ বনে বেষ্টিত এখানকার পরিবেশ দেখে ভীষণ মুগ্ধ তারা। বলেন,সারাদিন ছবি তোলা আর আনন্দ-উচ্ছ্বাস করে সময় পার করছি,খুব ভালো লাগছে। কুকরি-মুকরির চারদিকে ম্যানগ্রোভ এ বনাঞ্চলে,বসার জন্য ছাতা আর তাবু টাঙ্গিয়ে নির্মল পরিবেশে ক্লান্তি দূর করছেন পর্যটকরা। কেউ আবার খেলাধুলা আর ছঁবি তোলায় ব্যস্ত। তবে এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা কুকরীবনে অবকাঠামোগত আরো উন্নয়নের দাবি করছেন সরকারের কাছে । সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ী মোরশেদ আলম বলেন,এখানে আমরা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারছিনা। সরকারের সাপোর্ট পেলে তারা কুকুরীবনের পরিবেশকে আরো সুন্দর করতে পারবেন বলে আশাবাদী। স্থানীয় বাসিন্দা কামাল গোলদার ও ঈমাম হোসেন বলেন,পর্যটকরা এখানে এসে একটু বাড়তি সুবিধা পেতে চায়,সেই সুবিধা দিতে পারলে স্পটটি আরো উন্নত হবে। উন্নয়ন হবে অর্থনীতির। তারা বলেন এখানে থাকা-খাওয়ার আরো সু-ব্যস্থা নিশ্চিত হলে পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এদিকে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে কুকরি-মুকরি আগের চেয়ে বেশ উন্নত হওয়ার ফলে পর্যটক বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের। কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবুল হাসেম মহাজন বলেন, সারাদেশের মানুষ এক নামেই চিনে কুকরি-মুকরিকে। তাই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। বিগত বছরের মত এ বছরও পর্যটকদের সমাগম হতে চলেছে দর্শনীয় এ এলাকটিতে। এ ব্যাপারে ভোলা উপকূলীয় বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন,দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে কুকরী দ্বীপকে আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে বেশ কিছু সবুজ বনায়ন’সহ নতুন অবকাঠামো হয়েছে। পর্যটকরা এখানে এসে যেন পরিপূর্ণ তৃপ্তি পায় সেজন্য আরো আধুনিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে বলেও জানান ওই বনের এ কর্মকর্তা। এদিকে সাগর উপকূলে গড়ে উঠা শতবছরের প্রাচীণতম এ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সমৃদ্ধ দ্বীপটি যেনো দক্ষিণাঞ্চলের আরেক সুন্দরবন। এখানকার বনে হরিনের পাল,বানর,কাঠ বিড়াল,বণ্য গরু মহিষের পাল আর অতিথি পাখির কল কাকলীগতে মুখরিত কুকরী বন যেনো দক্ষিণ উপকুলে ভ্রমণ পিপাসুদের আরো মুগ্ধ করছে।