নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ মিয়া (৬৫) কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৪ আসামীকে আটক করেছে র্যাব। রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী নগরে অবস্থিত র্যাব-১১’র সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা। এর আগে গত শনিবার (২৯ জুন) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে এক আসামী এবং বাকি তিন আসামীকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রতনপুর এলাকা থেকে আটক করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১টায় ফতুল্লার উত্তর কাশীপুর আলীপাড়া মোড় এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় গত ২৯ জুন নিহতের ছেলে বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি মামলা (যার নং-৫৫) দায়ের করেন। আটককৃতরা হলো, ফতুল্লার কাশিপুরের সফর আলী মাঝির ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫), পশ্চিম ভোলাইল উত্তর কাশিপুর এলাকার আওলাদ হোসেনের ছেলে মো. আল আমিন (২২), একই এলাকার জাফরের ছেলে মো. রাসেল (২০) এবং পশ্চিম বুলাই এলাকার মো. সেলিমের ছেলে মো. সানি (২৯)। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, আটকরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং একাধিক মামলার আসামি। পক্ষান্তরে নিহত ভিকটিম সুরুজ মিয়া এলাকার সাবেক মেম্বার এবং কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। এছাড়া তিনি আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ভিকটিমের অটোরিকশা গ্যারেজ ও ইট-বালুর ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রধান আসামী হীরা (৩৫) এবং তার ভাই সালাউদ্দিন ওরফে সালুর সঙ্গে ভিকটিমের পূর্ব থেকেই বিরোধ ছিল। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে হীরা ও তার ভাই সালু এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে ভবনের মালিকের নিকট চাঁদা দাবি করেন। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ভিকটিম সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন। পরে ভিকটিম হীরা ও সালুর বাবাকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং হীরা ও সালুকে চাঁদাবাজী থেকে বিরত থাকতে বলেন। পরবর্তীতে গত ২৭ জুন সুরুজ মিয়া আলীপাড়া জামে মসজিদে থাকাকালীন আটকরা হীরার নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন প্রত্যেকের হাতে রামদা, বগিদা, ছোরা, লোহার রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলীপাড়া জামে মসজিদের দান বক্সের সামনে ভিকটিমের বড় ছেলে রাজু (৪৩) এবং ছোট ছেলে জনি (৪১) এর পথরোধ করে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে হীরার হাতে থাকা রামদা দিয়ে রাজুর মাথায় কোপ দিতে গেলে রাজু হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে তার হাতের কনুয়ের উপর আঘাত লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এছাড়া অন্যান্য আসামিরা রাজু এবং জনিকে এলোপাতাড়ী আঘাত করতে থাকেন। এরইমধ্যে জোহরের নামাজ শেষে ভিকটিম মসজিদ থকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আসামিরা তাকেও মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরুজ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। র্যাব আরও জানায়, আটক আসামী আলাউদ্দিন ওরফে হীরার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় চুরি, ডাকাতি, হত্যাচেষ্টা এবং গুরুতর জখমসহ ১০টিরও অধিক মামলা, আল আমিনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ একাধিক জিডি এবং রাসেলের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানায় র্যাব।