শ্রীলংকার বোলিং নৈপুন্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপে হ্যাট্টিক পরাজয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের। আজ টুর্নামেন্টে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে শ্রীলংকা ৮ উইকেটে হারিয়েছে ইংলিশদের। এই জয়ে ৫ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পঞ্চমস্থানে উঠে এলো শ্রীলংকা। সমানসংখ্যক ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নবমস্থানে নেমে গেল ইংল্যান্ড। পাশাপাশি সেমিফাইনাল খেলার আশাও অনেকটাই ফিকে হয়ে গেল ইংলিশদের।
শ্রীলংকার বোলিং তোপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৩৩ দশমিক ২ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ইংলিশদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন বেন স্টোকস। শ্রীলংকার সফল বোলার লাহিরু কুমারা নেন ৩ উইকেট। জবাবে দুই অপরাজিত ব্যাটার পাথুম নিশাঙ্কার ৭৭ ও সাদিরা সামারাবিক্রমার ৬৫ রানে ১৪৬ বল বাকী রেখে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে শ্রীলংকা। বিশ^কাপের ইতিহাসে এই নিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারালো শ্রীলংকা। ব্যাঙ্গালুরুতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে শুরুটা ভালোই ছিলো ইংল্যান্ডের। ৩৯ বলে ৪৫ রানের সূচনা করেন দুই ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান।
সপ্তম ওভারে মালানকে ২৮ রানে থামিয়ে ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন কাঁধের ইনজুরির কারনে মাথিশা পাথিরানার পরিবর্তে বিশ^কাপের মাঝপথে দলে ডাক পাওয়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। প্রথম উইকেট পতনের পর মিনি ধস নামে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপে। ৮৫ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় তারা।
জো রুট ৩ রানে রান আউট, বেয়ারস্টো ৩০ রানে কাসুন রাজিথার, অধিনায়ক জশ বাটলারকে ৮ ও লিয়াম লিভিংস্টোনকে ১ রানে শিকার করে কুমারা।
ষষ্ঠ উইকেটে শ্রীলংকার বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে উইকেট পতন ঠেকান স্টোকস ও মঈন আলি। তাদের ৪৬ বলে ৩৭ রানের জুটিতে রানের চাকা সচল হয় ইংল্যান্ডের। ১৫ রান করা মঈনকে শিকার করে শ্রীলংকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন ম্যাথুজ।
মঈনের পর ক্রিস ওকসকে শূণ্যতে রাজিথা এবং ৬টি চারে ৭৩ বলে ৪৩ রান করা স্টোকসকে শিকার করে ইংল্যান্ডের ইনিংস দ্রুত যাবার পথ তৈরি করেন কুমারা। শেষ পর্যন্ত ৩৩ দশমিক ২ ওভারে ১৫৬ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ডের ইনিংস। এবারের বিশ^কাপে এটিই সর্বনি¤œ রান ইংল্যান্ডের। লোয়ার অর্ডারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন ডেভিড উইলি।
শ্রীলংকার কুমারা ৩৫ রানে ৩টি, সাড়ে তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বল করতে নেমে ৫ ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট নেন ম্যাথুজ। ৩৬ রানে ২ উইকেট নেন রাজিথা।
জয়ের জন্য ১৫৭ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলংকার। দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ৯ রানে ওপেনার কুশল পেরেরাকে ব্যক্তিগত ৪ রানে বিদায় দেন পেসার উইলি।
তিন নম্বরে নেমে ২টি চারে ইনিংস শুরু করলেও, উইলির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১১ রানে বিদায় নেন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। এতে ষষ্ঠ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা।
শ্রীলংকাকে চাপমুক্ত করতে শক্তহাতে দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে রানের চাকা সচল রেখে ১৭তম ওভারে শ্রীলংকার রান ১শতে নেন তারা। ১৮তম ওভারে ওয়ানডেতে ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৫৪ বল খেলা নিশাঙ্কা। এই নিয়ে টানা চার ম্যাচে হাফ-সেঞ্চুরি করলেন নিশাঙ্কা। এতে কুমার সাঙ্গাকারার পাশে বসলেন নিশাঙ্কা। ২০১৫ সালের বিশ^কাপে টানা চার ম্যাচে অর্ধশতক করেছিলেন নিশাঙ্কা। সেই সাথে এ বছর ১১তম হাফ-সেঞ্চুরি করে ভারতের শুভমান গিলকে নজির স্পর্শ করলেন নিশাঙ্কা। এ বছর ১১টি হাফ-সেঞ্চুরি আছে গিলেরও।
২৩তম ওভারে ওয়ানডেতে সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন সামারাবিক্রমা। টানা দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করতে ৪৪ বল খেলেছেন সামারাবিক্রমা।
২৬তম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে শ্রীলংকার জয় নিশ্চিত করেন নিশাঙ্কা। তৃতীয় উইকেটে ১২২ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৩৭ রান যোগ করেন তারা। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮৩ বলে অপরাজিত ৭৭ রান করেন নিশাঙ্কা। ৫৪ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় অনবদ্য ৬৫ রান করেন সামারাবিক্রমা। ইংল্যান্ডের উইলি ৩০ রানে ২ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন কুমারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ইংল্যান্ড : ১৫৬/১০, ৩৩.২ ওভার (স্টোকস ৪৩, বেয়ারস্টো ৩০, কুমারা ৩/৩৫)।
শ্রীলংকা : ১৬০/২, ২৫.৪ ওভার (নিশাঙ্কা ৭৭*, সামারাবিক্রমা ৬৫*, উইলি ২/৩০)।
ফল : শ্রীলংকা ৮ উইকেটে জয়ী।