ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পর্দা উঠছে কাল থেকে। গ্রুপ পর্বের ফর্মেটে এটাই সর্বশেষ আসর। আগামী মৌসুম থেকে নতুন ফর্মেটের নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণীয় এই প্রতিযোগিতা।
নতুন ফর্মেটে ৩২ ক্লাবের পরিবর্তে দলসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬টি। অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল সিঙ্গেল লিগ পদ্ধতিতে খেলবে। এর ফলে প্রতিটি দল খেলবে আটটি ম্যাচ। বর্তমান ফর্মেটে প্রতি গ্রুপে একটি দল ছয়টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়।
২০২১ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১২টি ক্লাব বিতর্কিত সুপার লিগের পরিকল্পনার সাথে একমত পোষন করার পর থেকে উয়েফা নড়েচড়ে বসে। তখন থেকেই ইউরোপীয় সর্বোচ্চ সংস্থা কিভাবে ক্লাব ফুটবলকে আরো আকর্ষণীয় করা যায় সেই চিন্তা করতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন ফর্মেটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে আরো বেশী আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যস্থির করা হয়।
প্রায় দুই দশক আগে যে ফর্মেটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শুরু হয়েছিল তাতে আট গ্রুপে চারটি করে দল অংশ নেয়। প্রতি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি দল শেষ ১৬’তে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
গত বছর মে মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফর্মেট যখন চূড়ান্ত হয় তখন উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফেরিন বলেছিলেন, ‘নতুন ফর্মেটে প্রতিটি দলের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় থাকায় আমরা খুশি । এর মাধ্যমে ক্লাবগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো বাড়বে।’
এর আগে ২০০৩/০৪ মৌসুমে গ্রুপ পর্বের পরিবর্তে আট গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল নিয়ে নক আউট পদ্ধতিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফর্মেট নির্ধারিত হয়েছিল। তারপর থেকে এই ফর্মেটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উয়েফাকে বাধ্য হয়েই আবারো ফর্মেট পরিবর্তন করতে হয়েছে। ইউরোপীয়ান ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে এখন অনেক বেশী সমৃদ্ধ। সে কারনে টুর্ণামেন্টের প্রাইজ মানির ব্যপারে নতুন করে চিন্তা করেছে উয়েফা। এখানে অবশ্য ক্লাবগুলোর র্যাঙ্কিংয়ের বিষয়টি বিবেচনা করছে উয়েফা। র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা দলটি ৩৬ মিলিয়ন ইউরোর বেশী আয় করবে। এই পরিমান ক্রমান্বয়ে র্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে নীচে থাকা দলটির জন্য কমে আসবে। তলানির দলটি পাবে এক মিলিয়ন ইউরোর কিছু বেশী।
এমনকি এই ধরনের প্রতিযোগিতায় খেলতে এসে ছোট দলগুলো বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছে।
এবারের আসরে গ্রুপ-জি’তে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি ও জার্মান জায়ান্ট আরবি লিপজিগের সাথে খেলতে নামবে সুইস দল ইয়ং বয়েজ কিংবা সার্বিয়ান রেড স্টার বেলগ্রেড। ইস্তাম্বুল ফাইনালে গত জুনে জুনে ইন্টার মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জেতা সিটি এবারও গ্রুপ পর্বে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নামছে। ২০০৮ সালে আবু ধাবী ভিত্তিক মালিকের অধীনে বদলে যাওয়া সিটি শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়ান এলিট ক্লাব প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিয়েছে। প্রিমিয়ার লিগে গত কয়েক বছর একক আধিপত্য দেখালেও অজানা কারনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা পাওয়া হয়নি। গত মৌসুমের ফাইনালে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রড্রি জয়সূচক গোল করার পর বলেছিলেন, ‘আমাদের এখন এই প্রতিযোগিতার জন্য লক্ষ্য আরো বেড়ে গেল।’
গ্রুপ পর্বে সুইজারল্যান্ড কিংবা সার্বিয়ার পক্ষে সিটিকে ধরা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়। লিপজিগও গত মৌসুমে সিটির কাছে দলের সবচেয়ে বড় তারকা ডিফেন্ডার জাসকো গাভারডিওলকে হারিয়েছে। সে কারনে লিপজিগও কতটা প্রতিরোধ গড়তে পারবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবসময়ই শিরোপা দাবীদার রেকর্ড ১৪ বারের বিজয়ী রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও কার্লো আনচেলত্তির দল গ্রুপ পর্বে সিরি-আ বিজয়ী নাপোলি, ব্রাগা ও নতুন আসা ইউনিয়ান বার্লিনের বিপক্ষে কিছুটা কঠিন বাঁধার মুখে পড়তে পারে।
হ্যারি কেনকে দলে পেয়ে বায়ার্ন মিউনিখ তাদের আক্রমনভাগকে শক্তিশালী করেছে। পিএসজি নেইমার ও লিওনেল মেসিকে হারালেও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে কিছুটা হলেও শক্তি সঞ্চয় করেছে। দুই দলেরই মৌসুমের মূল লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ভাল পারফরমেন্স। ২০১৬/১৭ সালের পর প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরা স্মরণীয় করে রাখতে চায় আর্সেনাল। অন্যদিকে দুই দশক পর ফিরে এসে নতুন চেহারার উজ্জীবিত নিউক্যাসল নিজেদের প্রমানে মুখিয়ে আছে। যদিও গ্রুপে তাদের পিএসজি, এসি মিলান ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।