খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সেপ্টেম্বর মাসের সভা গতকাল সকালে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে তার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, পুলিশ মানুষের সেবায় সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের চারপাশের যে কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে অবহিত করলে তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে সমাজ থেকে অপরাধমূলক কার্মকান্ড দূর করতে পুলিশ আরোও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে। আসন্ন দুর্গাপূজা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের যে কোন ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টার প্রতিরোধে পুলিশ সর্বদা সজাগ দৃষ্টি দেখে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যেকোন ধরণের গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে সবাইকে আরোও সচেতন হতে হবে। এলাকায় নতুন কাউকে দেখলে তার কার্মকান্ড ও গতিবিধির ওপর প্রতিবেশিদের নজর রাখা আশু প্রয়োজন বলে জানান খুলনা পুলিশ সুপার। খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সবিজুর রহমান সভায় জানান, এবছর দেশে ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব বেশি সে কারণে সবাই সচেতন না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এ রোগের জন্য এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে হবে এবং পাশাপাশি খুলনা শহরে ইদানিং নির্মাণাধীন ভবনগুলিতে অপরিষ্কার পানি জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যার কারনে সেখানে এডিস মশার বংশ বিস্তার বৃদ্ধি পাচ্ছে । তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুজ্বর উপশমে ডাবের পানি পান করার কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। তাছাড়াও জেলার সকল উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাপে কামড়ানো রোগীদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভেনম এক সপ্তাহের মাধ্যে পৌঁছে যাবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (সদর দপ্তর) সোনালী সেন সভায় জানান, মেট্রোপলিটন এলাকায় মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছ। যার ফলে সম্প্রতি মাদকদ্রব্য আটকের পরিমান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল ধরণের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট ও মোবাইল প্যাট্রোল চলমানের পাশাপাশি আসন্ন দুর্গাপূজার সময় অপরাধ প্রবণতা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও অনলাইন জুয়া বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করে নগরবাসীর সুনাম অর্জন করে চলেছে। সভাপতির বক্তব্যে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার বিচার ত্বরান্বিত করতে যথাসময়ে সাক্ষ্য-প্রমান হাজিরের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সমাজে মাদকের বিস্তাররোধে পারিবরিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আসন্ন দুর্গাপূজার সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরোধে সকল পূজা মন্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপনের ওপর জোর দিতে হবে। পূজা মন্ডপে বিদ্যুৎ সংযোগ নিরাপদ না হলে যে কোন ধরনের অপরাধ ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সভাপতির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক আরোও বলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি বৃদ্ধি করা প্রতিনিয়ত প্রয়োজন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর আলিফ রেজা সভায় বিগত মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, খুলনা জেলা অধিক্ষেত্রে বিগত আগস্ট মাসে ১৬৯টি মামলা দায়ের হয়েছে, যা বিগত জুলাই মাসে দায়ের হওয়া মামলা সংখ্যার চেয়ে ৩৪টি কম। খুলনা মহানগরী অধিক্ষেত্রে আগস্ট মাসে ২০৪টি মামলা দায়ের হয়েছে, যা বিগত জুলাই মাসের দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ২৮টি বেশি। উক্ত জেলা ইনশৃঙ্খলা কমিটি সভায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।