বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সদস্য সচিব গোলাম মসীহ্ বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন এলাকায় কাজ শুরু করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে।’
গোলাম মসীহ্ জানান, বেগম রওশন জানিয়েছেন সাংবিধানিক ধারা মেনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর সে নির্বাচন হবে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু কমিশনকে সহায়তা করবে। ওই নির্বাচনেই অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। এছাড়া নেতাদের স্ব-স্ব এলাকা যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ম্যাডাম রওশন। সম্প্রতি দৈনিক মানবকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ্।
আলাপে জাপার এই নেতা বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয় না। নির্বাচন কমিশনই পারে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে। অস্থায়ী সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাই বলা হোক না কেন, কোনো অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না জাতীয় পার্টি।’
অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর সমালোচনা করে একান্ত আলাপে গোলাম মসীহ্ বলেন, ‘তারা কেউই জাতীয় পার্টি ও পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতি সুবিচার করেনি। নির্বাচন, ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় পার্টির প্রতি নিরপেক্ষ আচরণ করা হয়নি। ৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তত্কালীন অস্থায়ী সরকারের কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়েছে, তারা জাতীয় পার্টি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের প্রতি অন্যায় করেছে।’
প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কখনই সুখকর নয়। বিশ্বের উন্নত গণতন্ত্র চর্চার দেশগুলোতে এমন ব্যবস্থা নেই। ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনই হতে পারে গ্রহণযোগ্য সমাধান।’
আগামী সংসদ নির্বাচনে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহ ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষক হিসেবে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখুন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও সাংবিধানিক বিষয়ের ওপর কারো অযাচিত হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
তিনি জানান, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা। গোলাম মসিহ্ আরও জানান, ‘এরশাদের অবর্তমানে দ্বাদশ নির্বাচন প্রথম, তাই এই নির্বাচনটাই চ্যালেঞ্জ। আশা করি দেশের মানুষরা এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এরশাদকে। জাতীয় পার্টির অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাবে।’
পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে বিরোধ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কাছাকাছি আসলে বিরোধ নিরসন হয়ে যাবে।’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। এছাড়া দেশের সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করছেন বেগম রওশন। নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, দলের মধ্যে উত্সাহ উদ্দীপনা আছে। আমাদের প্রস্তুতি থাকবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়া। চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠিক করবে পার্টির শীর্ষ নেতারা।’
দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য দাবি জানিয়ে একান্ত আলাপে গোলাম মসীহ্ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ ঘনবসতি দেশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলে দেশের মানুষের দুর্ভোগ ডেকে আনে। জিনিসপত্র সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘প্রচুর বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে হবে। মদ, জুয়া ও ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’
গোলাম মসীহ বলেন, ‘বর্তমানে যারা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ যারা জেলখানায় আছে তাদেরকে আইন অনুযায়ী জামিনে মুক্তি দিতে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি সরকারের প্রতি।’