রাজশাহী বিভাগীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রায় ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যুবাদের মধ্যকার ৫ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তিনটিতে জয় তুলে ইতোমধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারীরা। সোমবার (১৫ মে) রয়েছে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ। তবে নানা অসংগতি ছিল ম্যাচ ব্যবস্থাপনায়। প্রশ্ন উঠেছে আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে। ভেতরে আন্তর্জাতিক ম্যাচ চলা অবস্থায় গ্যালারির বাইরে চোখে পড়ে মাদকের বোতল! এ ভেন্যুতে ডে-নাইট ম্যাচ না হলেও ফ্লাডলাইট থাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) শুধুমাত্র বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ করেছে! সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় প্রায় ৩৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বিভাগীয় স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয় ২০০৪ সালে। ওই বছরই স্টেডিয়ামটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের তিনটি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আর ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশীয় গেমসের চারটি ম্যাচ। এরপর থেকে বিসিবি পরিচালিত এ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ বন্ধ থাকে ১৩ বছর। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যুবাদের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচের মধ্য দিয়ে এখানে মাঠে গড়ায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ম্যাচটিতে চার উইকেটের দাপুটে জয়ে সিরিজ জয়ের আশা জিইয়ে রাখে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দল। যদিও চতুর্থ ম্যাচে টাইগার যুবাদের বিপক্ষে ২০০ রান তাড়ায় আট উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে সফরকারীরা। এ ম্যাচ ঘিরে চলছে সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, ম্যাচটিতে ক্রিকেটারদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্যাভিলিয়ন রাখতে ব্যর্থ হয় বিসিবি। মাঠের সীমানা দড়ির বাইরে কাপড় দিয়ে ঘিরে কোনোরকম ডাগ আউট তৈরি করে দায় সারে। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে রোদে বসে ম্যাচ শেষ করতে হয় দুদলের অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের। এছাড়া স্টেডিয়ামের চতুর্থ তলায় মিডিয়া বক্সে ভাঙা একটি টেবিল রেখে কেটে পড়েন আয়োজকরা। বসার অনুপোযোগী ওই কক্ষে বেশ অসুবিধা নিয়েই সংবাদ কাভার করেন সাংবাদিকরা। অবশ্য ম্যাচটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করে বিসিবি। এ সময় গ্যালারির বাইরে ঘুরে ১১ নম্বর গেট সংলগ্ন বাইরের অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় ফেনসিডিলের বোতল। একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানে মাঝেমধ্যেই বসে মাদকের আসর। কর্তৃপক্ষও বিষয়টি জানে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আনাগোনাও রয়েছে এলাকাটিতে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভাগীয় এ স্টেডিয়ামের জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুতের লোড। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৩ থেকে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। ফ্লাডলাইট না জ্বললেও এতে প্রতিমাসে বিল আসে এক লাখ টাকার ওপরে। সবশেষ মার্চ মাসের বিল এসেছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৪৪০ টাকা। এ বিল অপরিশোধিত রয়েছে। তবে ২০০৪ সাল থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে বিসিবি। দিবারাত্রীর (ডে-নাইট) আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন না করেও ১৯ বছরে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিদ্যুৎ পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল তৈরি প্রক্রিয়াধীন। নেসকো থেকে এ স্টেডিয়ামের বিল লেখা হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ রাজশাহীর উপপরিচালক বরাবর। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক মিসেস আয়েশা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ বিল বিসিবি পরিশোধ করে, এটা তারাই ভাল বলতে পারবে। মাদকের আসর ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি রাজশাহীতে এসেই বিষয়টি নজরে এসেছে। ঘটনাটি আমি জানি ও পুলিশকে জানিয়েছি। কয়েকজন অফিসার এসেছিল, এরপর থেকে প্রকোপ কিছুটা কমেছে। আয়েশা বেগম অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ল্যাক আছে। স্টেডিয়ামের বাইরের দালান অনেক নীচু, আর গার্ড মাত্র ২-৩ জন। সেজন্য ভেতরে সুযোগ পেয়েছে মাদকসেবীরা। আমার অফিসে আলোচনা করেছি। অফিস সহকারিরা বলেছে- এটা বেশি বলতে গেলে আমাদের সমস্যা, ওরা (মাদকসেবী) আমাদের আক্রমণ করবে। অনেক আগে নাকি অফিস সহকারিকে মারপিটও করেছিল।’ জানতে চাইলে বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার আরেফিন ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল আগের এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী পরিশোধ করা লাগত। যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে ততটুকুরই বিল দেব বলে আমরা নেসকোকে জানিয়েছি। যেহেতু সরকারি বিষয়। সেজন্য সময় লাগবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’ মাদকের আসরের বিষয়ে তিনি অবগত নন দাবি করে এ ব্যাপারে তথ্য পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।