খুলনায় তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহে খুলনায় বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ। এছাড়া প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে শত শত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশুরা। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরেও ফের আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। ডায়রিয়া রোগীদের নানা ধরনের পরামর্শসহ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। খুলনা নগরীর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ যাবৎ ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। খুলনা শিশু হাসপাতালে গতকাল সোমবার ভর্তি ছিল ৬০ জন। মঙ্গলবার দুপুর পযন্ত ৪৫ জন ভর্তি হয়েছে। সদর হাসপাতালে কোন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি করা হয় না। রেফার্ড করা হয় মীরের ডাঙ্গা সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতালে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তন্মাধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন ভর্তি হচ্ছে। উপজেলা পযায়ে সবচেয়ে বেশি ভর্তি রয়েছে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে ১০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি রয়েছে। আর গত এক সপ্তাহে ১৯ জন ভর্তি হয়। এছাড়া পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। গত এক সপ্তাহে ২৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে ৭ জন। গত এক সপ্তাহে ১৮ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়। দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন ভর্তি রয়েছে। আর গত এক সপ্তাহে ১১ জন রোগী ভর্তি হয়। ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪ জন ভর্তি রয়েছে। আর গত এক সপ্তাহে ২৪ জন রোগী ভর্তি হয়। রূপসায় গত এক সপ্তাহে ১৭ জন ভর্তি হয়। আর বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ২ জন। বটিয়াঘাটায় ভর্তি রয়েছে ৮ জন। ডুমুরিয়ায় বর্তমানে কোন রোগী ভর্তি নেই। কথা হয় খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগী আবরারুল হক (২) এর পিতা আব্দুস সাত্তারের সাথে। তিনি জানান, ছেলেকে ১০ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করি। সুস্থ হওয়ায় ৪ দিন পর রিলিজ নেই। দুই দিন ভালো থাকার পর ফের সমস্যা হওয়ায় ১৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হই। এখন অনেকটা সুস্থ রয়েছে। আশাশুনি উপজেলার খাজুরা থেকে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগী রোকেয়া (৬৫) বলেন, ৩ দিন হলো ভর্তি হয়েছি। এখন অনেকটা ভালো। আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে এসেছি। খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ডায়রিয়া রোগী অনেকটা বেড়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী আসছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিতীশ গোলদার বলেন, ১০ এপ্রিলের পর থেকে বহিঃবিভাগ ও ইনডোরে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর আগে ডায়রিয়ার তেমন রোগী ছিল না। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মো. মাহবুবুল আলম বলেন, অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, গরমে ডায়রিয়া রোগী অনেক বেশি আসছে। গত এক সপ্তাহে বহির্বিভাগ থেকে অর্ধশতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে ৭ জন ভর্তি রয়েছে। শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। কয়রাতে প্রচুর সুপেয় পানির সমস্যা রয়েছে। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনায় তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রচন্ড তাপদাহে যেমন বায়ু দুষণ হচ্ছে, তেমনি পানি দুষণও হচ্ছে। ফলে ডায়রিয়া রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষের সতর্ক থাকতে হবে। বাড়ি থেকে প্রয়োজন ছাড়া না বের হওয়াই ভালো। শিশুদের পানি ফুটিয়ে কিংবা বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার খাওয়াতে হবে।