একটি সেতুর অভাবে সীমাহীন কষ্ট ভোগ করছেন চট্টগ্রামের দু’টি উপজেলার মধ্যবর্তী সাঙ্গু নদীর দু’পাড়ে বাস করা চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার (মধ্যম চরতি গ্রামের) কয়েক হাজার মানুষ। এ এলাকাবাসী সাতকানিয়ার চরতি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ভোটার হলেও জায়গার মৌজা চন্দনাইশের বরমার খতিয়ানভুক্ত। তাই এলাকাবাসী জায়গার খাজনা সরকারি রাজস্ব পরিশোধে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেনবলে জানা যায়।
উপজেলা দু’টির সংযোগস্থলের এই নদীটি পেরোনোর জন্য নির্মিত ৩০০ ফুটের বাঁশের সাঁকোটিই বলে দেয় মানুষের চলাচলের জন্য একটি স্থায়ী সেতু এখানে কতোটা জরুরি। কিন্তু নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে চন্দনাইশ উপজেলার বরমার ৮নং ওয়ার্ড বাতাইজুড়ি ও যতরকুল এবং ৯নং ওয়ার্ড চর বরমা শিটে পরিবর্তন হয়ে সাতকানিয়ার মধ্যম চরতিতে সংযুক্ত হওয়ার পর ২৫ বছরেও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সে বিষয়টি অনুধাবন করেননি সংশ্লিষ্টরা। জনস্বার্থে এ সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য যারা দায়িত্ব প্রাপ্ত তারা তা না করলেও থেমে থাকেনি ওই অঞ্চলের ঘাটের ইজারাদার মো. ফারুক হোসেন। তার নেতৃত্বে এলাকাবাসীর প্রয়োজনে ২ বছর আগে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তিনি বানিয়েছেন ৩০০ ফুটের একটি সাঁকো। সে সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন দু’পাড়ের হাজারো আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, শিক্ষার্থী, কৃষক-কৃষাণীসহ নানান শ্রেণির পেশাজীবি মানুষ। এখানকার মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকার মাধ্যমে পার হতে হয় এই নদী। শিক্ষার জন্য এই এলাকার জনগণকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফোরকানিয়া শিক্ষাশেষে শিক্ষার্থীদেরকে শঙ্খ নদী পাড় হয়ে বরমা ত্রাহি মেনকা উচ্চ বিদ্যালয়, বরমা সিনিয়র মাদরাসা ও বরমা কলেজে লেখাপড়া করতে হয়। ঘাটের ইজারাদার মো. ফারুক হোসেন জানান, এ এলাকার মানুষ অধিকাংশ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করার কারণে আসা যাওয়ার ভাড়া ১০ টাকা। তবে তিনি জোর করে ভাড়া আদায় না করায় সঠিকভাবে তাও নেয়া সম্ভব হয় না। তবে তিনি বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকা সরকারকে রাজস্ব পরিশোধ করেন বলে জানান। এই এলাকার বাসিন্দা মনজুর আলম (৭০) বলেছেন, শঙ্খের ভাঙনের কারণে ১১বার বসতঘর পরিবর্তন করে ২ ছেলে, ১ মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে অতিকষ্টে নৌকা চালিয়ে সংসার জীবন অতিবাহিত করছেন। কৃষক মো. ইলিয়াছ (৬০) বলেছেন, ৬ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে চাষাবাদ করে জীবনযাপন করছেন। সরকারি তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা পান না বলে অভিযোগ তাদের। সড়ক যোগাযোগে সুবিধার জন্য চন্দনাইশের যতরমুখ ঘাটের সাথে সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর। মধ্যম চরতি ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার হানিফ জানান, এ দ্বীপে বসবাস করেন অধিকাংশ মানুষ সাতকানিয়া উপজেলার। তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন সাতকানিয়াতে। যদিও জায়গার খতিয়ানভুক্ত ২টি মৌজা চন্দনাইশ বরমা ইউনিয়নের। বরমা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড বাতাইজুড়ি ও যতরকুলের মেম্বার জয়দেব গাঙ্গুলি জানান, বিগত ১৯৯৬ সালে আ’লীগ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সাঙ্গু নদীর ভাঙ্গন দেখে পাথর দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হলো না এই অঞ্চলের। এ ভাঙ্গনে অনেক পরিবার থেকে অতি আপন ভাইকেও আলাদা করে দিয়েছে প্রকৃতি। প্রতি সাপ্তাহিক বাজারে একসঙ্গে কথা হয় আলাদা হওয়া পরিবারের সাথে। তারা আগের মত একসঙ্গে সমাজবদ্ধজীবন যাপন করার ইচ্ছা পোষণ করে সবসময় বলে জানান তিনি। বরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম টিটু জানান, শঙ্খ নদীর বুকে জেগে ওঠা মধ্যম চরতি অংশটিতে চন্দনাইশের বরমা মৌজার শিটের অংশের পাশাপাশি সাতকানিয়ার চরতি মৌজারও জায়গা রয়েছে বলে দাবি করেন। তাই মধ্যম চরতির অধিবাসীরা চন্দনাইশ বরমার সাথে সংযুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করে অনেকবার আবেদন করেছেন। তবে, সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতে তাদের আপত্তি নেইবলে জানিয়েছেন। চন্দনাইশ উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মাদ জুনাইদ আবছার চৌধুরী বলেন, পানির উপরভাসমান সেতু দেখে দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কর্তৃক স্থানীয়প্রকৌশল অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতেছে বলে জানান। তিনি আরোও জানান এটি চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদীয় এলাকা হওয়ায় টেরিটরি সাতকানিয়া উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর এ ব্যাপারে বেশি জানবে এবং তারা প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ
নিলে ভালো হতো। বিষয়টি অনুধাবন করে সচেতন মহল শঙ্খ নদীর উপর একটি অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও সেতু নির্মাণ করা সময়ের দাবি বলে জানান।