চলতি বছর হজের খরচ কমানো কিংবা প্যাকেজ পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। এ বছর হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে চার লাখ টাকার মধ্যে পুননির্ধারণ করতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী- এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন। চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি প্যাকেজের মাধ্যমে হজ পালনের নিয়ম রাখা হয়েছে। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। এবার হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কোটা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দফায় দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হলেও হজযাত্রীদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এরমধ্যে গত ৬ মার্চ হজের খরচ চার লাখ টাকায় নামিয়ে আনতে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আল কোরআন স্ট্যাডি সেন্টার সুপ্রিম কোর্টের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ্-জামান। নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমাদের হাতে এখনও আসেনি। আসলে এটা নিয়ে আমাদের যা করণীয় আমরা করবো।’ হজের খরচ কমানো বা প্যাকেজ পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। সুযোগ থাকলে আমরাই তো চাপ দিয়ে করাতাম (খরচ কমানো)।’ এবার হজের খরচ বেশি হওয়ার বিষয়ে ফরিদুল হক খান বলেন, ‘সৌদি আরবের মিনায় বাসস্থানের জন্য এবার এক লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। টাকার বিপরীতে রিয়ালের দাম বাড়ার কারণে এবার ৬৩ হাজার টাকা বেড়েছে। বিমানভাড়াও বেড়েছে।’ হজযাত্রীদের বিমানভাড়া অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে, এটি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিমানভাড়া বাড়তো না, এটা কিন্তু ডেডিকেটেড ফ্লাইট। এখানে হজযাত্রী ছাড়া অন্য কোনো যাত্রী নেওয়া হবে না। বিমান জেদ্দাতে হজযাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি আসবে। প্রধানমন্ত্রী কোনোভাবেই চান না দেশের মানুষের ওপর চাপ পড়ুক। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে হজযাত্রীদের ওপর চাপটা পড়েছে। মানুষের বুঝতে হয়তো সময় লাগছে। মানুষ প্রথমে বুঝতে পারেনি, এখন আসল ঘটনাটা বুঝতে পারছে।’ হজ পোর্টালের গতকাল রোববার সকালের তথ্যানুযায়ী- সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৭৩ হাজার ২০৮ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। এরমধ্যে সরকারিভাবে ৯ হাজার ২৮৯ জন ও বেসরকারিভাবে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন নিবন্ধন করেছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়। নিবন্ধনের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। পরে সময় দুই দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ বাড়ানো সময় অনুযায়ী নিবন্ধনের শেষ সময় ১৬ মার্চ। এ বিষয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা যাতে পূর্ণ হয় এজন্য আমরা দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছি। প্রাক-নিবন্ধনের একটা ক্রমিক পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়ে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে যারা নিবন্ধন করছেন না, পরে সময় বাড়িয়ে প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। একবারে সময় দিলে এটা করা যেতো না। আবার একসঙ্গে প্রাক-নিবন্ধনের বেশি সংখ্যককে নিবন্ধনের সুযোগ দিলে সবাই যদি নিবন্ধন করেন, তবে তো আমি সবাইকে পাঠাতে পারবো না। তাই ধাপে ধাপে নিবন্ধনের সময় বাড়ানোতে সুবিধা রয়েছে।’
১৩ হজযাত্রীর হজ যাত্রা অনিশ্চিত: ‘নিবন্ধনে দেরি হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, আমাদের এজেন্সিগুলো বাড়িভাড়া করতে দেরি করছে। কোথায় একটু কমে পাবেন না পাবেন, সেটা চিন্তা করছেন। ভাড়া না নেওয়া পর্যন্ত এখন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাবেন না। নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারবে না। কোটা পূরণ হবে বলে আমি আশাবাদী। না হওয়ার কোনো কারণ নেই’ বলেও মনে করেন ফরিদুল হক খান। গত বছর হজে অনিয়ম করা এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে যাতে কেউ অনিয়ম করতে না পারেন, সেজন্য যেমন ব্যবস্থা নিয়েছিলাম এবারও তেমনই থাকবে। অনিয়ম আগের চেয়ে অনেক কমেছে। গত বছরের হজ নিয়ে তেমন কোনো সমালোচনা হয়নি।’ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত বছর ৩৫ দিন আগে সৌদি আরব আমাদের টেলিফোন করে জানিয়েছিল। চিঠি পেয়েছি ১৯ দিন আগে। আমরা ১৯ দিনে কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছি ইনশাআল্লাহ। এবার তো আমরা অনেক সময় পেয়েছি। কাজেই এবার তো সেই ধরনের তাড়াহুড়ো নেই। আমি বিশ্বাস করি, আগের চেয়ে ভালো হবে।’