কারো বাড়ি বিক্রির টাকা, কারো প্রবাসী সন্তানের টাকা, দিন মজুরদের জমানো টাকাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একটু লাভের আশায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় (এনজিও) টাকা রেখেছিলেন। কয়েক বছর লাভ পেলেও বছর দুয়েক আগে সেই লাভ দেওয়া বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। এমনকি গত ছয় মাস ধরে গ্রাহকদের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা। ফলে অনেক গ্রাহক এখন নিঃস্ব হয়েছেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা গ্রামের সোসাইটি ফর হিউম্যান ইউনিটি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইউটিলাইজেশন (শুরু) নামের এনজিও কর্তৃপক্ষ এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। টাকা ফেরত পেতে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গ্রাহকরা। এনজিওর মালিক পলাতক থাকায় হতাশায় ভুগছেন গ্রাহকরা। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) টাকা ফেরত পেতে ওই এনজিও কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রাহকরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ওই এনজিওর সদস্য তারেক হাসান, আলী আহম্মদ, জয়নু বেগম, অঞ্জনা বেগম প্রমুখ। গ্রাহকরা জানান, ১২ বছর আগে গালা গ্রামের মাজেদুর রহমান, আবু সাইদ, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েক জনে মিলে ‘শুরু’ নামের এনজিওটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে বাড়ি বিক্রির টাকা, গ্রামের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিরীহ কৃষক ও দিন মজুরাও টাকা রাখেন। এমননি অনেক প্রবাসীরাও টাকা রেখেছেন। তিন শতাধিক গ্রাহকের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে এনজিও নির্বাহী পরিচালক মাজেদুর রহমান উধাও হয়েছেন। কষ্টে অর্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন গ্রাহকরা। ৮৫ বছরের বৃদ্ধ আলী আহম্মদ বলেন, আমার চার মেয়ে ও এক ছেলে। ১০ বছর আগে সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় আমার ছেলে মারা যায়। সেখান থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা ‘শুরু’ এনজিওতে রেখেছিলাম। সেই দুই লাখ টাকা নিয়েও মালিক পালিয়েছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। শারিরীক প্রতিবন্ধী শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি না। তাই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ভিক্ষা করে জীবনযাপন করি। সেই টাকা থেকে জমিয়ে এক লাখ টাকা ১২ বছর আগে জমা করেছিলাম। সেখান থেকে আমি কোনো লাভ নেইনি। সেই টাকা নিয়েও মালিক পালিয়েছে। কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে আমার টাকা ফেরত পাবো আমি তাও জানি না। ৬০ বছরের বৃদ্ধা জয়নু বেগম বলেন, আমার বাড়ি বিক্রি করা চার লাখ টাকা এই এনজিওতে রেখেছিলাম। আমার টাকা নিয়ে মালিক পালিয়ে যাওয়ায় আমি এখন নিঃস্ব। হতাশায় ভুগছি। গ্রাহক তারেক হাসান, বাবলী তালুকদার, অজ্ঞনা বেগম, মঞ্জু বেগম ও রহমান আলী বলেন, এই ‘শুরু’ এনজিওতে আমাদের গ্রামের তিন শতাধিক গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা জমা ছিলো। সেই টাকা নিয়ে মালিক পালিয়েছে। আমাদের টাকা ফেরত চাই। এ বিষয়ে শুরু এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক মাজেদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, কয়েক প্রতারক চক্র মিলে এনজিওটি করেছিলো। আমরা তাদের তাদের কোন অনুমতি দেয়নি। তবে আমরা ওই কমিটি বাতিলের জন্য কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করতে পারবো।