র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৩ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে মাদক, অস্ত্র, জঙ্গিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। ধৃত আসামির বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিত তালিকা মোতাবেক ধৃত আসামি আব্দুল ওয়াহেদ জামায়াত ইসলামীর গাইবান্ধা সদর এর সদস্য সচিব ছিল।অত্র এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাত। ১৯৭১ সালের পহেলা জুন সকাল ১০.ঘটিকার দিকে ১৫/২০ জন পাকিস্তানি আর্মি এবং রাজাকারের সাথে মিলে উক্ত মামলার মৃতুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল, তার পিতা আব্দুল জব্বার মন্ডল, তার ভাই জাছিজার রহমান মন্ডল, মোন্তাজ ও রঞ্জু মিয়াসহ হেলাল পার্ক আর্মি ক্যাম্প হতে একদল পাক হানাদার ও রাজাকারের সমন্বয়ে ২০/২৫ জনের একটি দল গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে হিন্দু সম্পদায়ের উপর পূর্ব পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণহামলা চালায়। আঘাতের ফলে অম্বিকাচরন মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকলে তারা তাকে মৃত মনে করে ফেলে রেখে লুটপাটকৃত মালামাল নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। এরপর রাজাকার ও পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মিলিত হয়ে আব্দুল ওয়াহেদ তার ভাই জাছিজারসহ আরও বেশ কয়েক জনকে নিয়ে একই গ্রামের দিজেশচন্দ্র সরকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বিপুল আকারে লুটপাট চালায়। এছাড়াও ফুলকুমারী রাণী এবং তার ননদ সন্ধ্যা রাণী সরকারকে পাশবিক নির্যাতনপূর্বক জোড় করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায়।এছাড়াও তারা অত্র এলাকার ৪৫/৫০ টি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে পরিবারগুলোকে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য করে। আব্দুর রউফ ২০০৯ সালে গাইবান্ধা অধস্তন আদালতে ধৃত আসামী আব্দুল ওয়াহেদসহ ০৫ জনকে বাদী করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলে আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্যান্য আসামিরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত জামিনে থাকে। ২০১৬ সালে জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে এবং পরবর্তী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হলে তখন থেকে উক্ত আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর গভীর তদন্তে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমানিত হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক ০৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করা হয়। এদিকে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন ২০১৬ সালে মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল তার নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আত্মগোপনে থাকতে শুরু করে। সে মাঝে মাঝে গোপনে তার পরিবারের সাথে দেখা করত। ২০১৬ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন সে কখনই আদালতে হাজিরা দেয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রাতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকা মহানগরীর মুগদা থানাধীন মান্দা এলাকা হতে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক আসামি মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডলকে র্যাব-৩ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। দুপুরে রাজধানী কাওরানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃকর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,আসামী আব্দুল ওয়াহেদ ১৯৭০ সাল থেকেই জামায়াতে ইসলামির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তারা রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সাথে যোগসাজসে বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাত। ধৃত আসামী, তার পিতা, বড় ভাই ও অন্যান্য আরও কয়েক জনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটির একটি দল নিয়ে হানাদার বাহিনীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে অত্র এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কার্যক্রম চালায়। তদন্তে প্রাপ্ত স্বাক্ষীদের সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা সদর থানায় তাদের নৃশংসতায় প্রাণ হারায় প্রায় ০৮ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং গৃহহারা হয় বহুসংখ্যক হিন্দু পরিবার। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান মামলার শুনানিতে হাজিরা না দেওয়ায় আব্দুল ওয়াহেদ এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর পরপরই আব্দুল ওয়াহেদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এবং সাভার এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। এরপর সে একটি তাবলিগ দলের সাথে যুক্ত হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলায় তাবলিগ করে আত্মগোপনে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে সে নিয়মিত তাবলিগ দলের সাথে স্থান পরিবর্তন করত। আত্মগোপনে থাকাকালীন সে ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রেখে ছদ্মনাম ব্যবহার করে নিজের পরিচয় প্রদান করত। মুগদা থানাধীন উত্তর মান্ডা এলাকায় তার ছেলে একটি ভাড়া বাসায় থাকত। উক্তস্থলে ছেলের সাথে দেখা করতে আসলে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয় এই অপরাধী। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ফারজানা হক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র্যাব-৩।