শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় পুরোদমে খোলা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিগগিরই শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রক্রিয়ায় টিকাদানের কার্যক্রম শুরু হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের জারি করা অনলাইন এবং সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সোমবার (৩১ মে) বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। সেজন্য সব শিক্ষার্থীদের তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আবাসিক হলে থাকা ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে।
পরবর্তীতে টিকা পাওয়া সাপেক্ষে ধাপে ধাপে বাকি শিক্ষার্থীদের করণা টিকা দেওয়া হবে। যেহেতু চল্লিশের কম এবং অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাই তাদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পাঠানোর তালিকা ধরে টিকা দেওয়া হবে।
বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সাবরিনা ফ্লোরা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, টিকা এলে ফ্রন্ট লাইনারদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা পাবে।
শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি রয়েছে। তাই চীন থেকে আসা পাঁচ লাখ টিকার প্রয়োগ শুরু হলেই প্রথম ধাপে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। এটি চলতি সপ্তাহে হতে পারে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। তবে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী এ পাঁচ লাখ টাকা থেকে টিকা নিতে পারবেন সেই সংখ্যা জানা যায়নি।
তবে বৈঠকে উপস্থিত উপাচার্যরা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। মঙ্গলবার (১ জুন) বৈঠকে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।
বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি উত্থাপন করেন উপাচার্যরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের থেকে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি বা অনলাইনে যার যেভাবে সক্ষমতা আছে, সেভাবে পরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে।
বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ, মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুইজন সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যোগ দেন।
এদিকে, সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার ঘোষণা দেওয়ার পর আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেওয়া হোক।
অন্যদিকে, সশরীরে এবং অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বৈঠকে বসে।
সোমবার (৩১ মে) বিকাল ৩টা থেকে দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক উপাচার্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তক্রমে আগামীকাল থেকে যেকোনো দিন থেকে স্বাস্থবিধি মেনে সশরীরে ক্লাস, পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আবাসিক হল খোলা যাবে না। আবাসিক হল খুলতে হলে শতভাগ টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। আর দ্রুত এ টিকাদান নিশ্চিত করতে একটি অ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যাদের অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা নেওয়ার সামর্থ আছে, তাদেরকে ইউজিসির আগে দেওয়া সাতটি শর্ত মেনে করতে হবে।’
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে এ সভা হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, ইউজিসি চেয়ারম্যান, সকল সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পারমর্শক কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ইউজিসির দেওয়া পরীক্ষা গ্রহণের শর্তগুলো হলো-
১. যেকোনো বিষয়ের তত্ত্বীয় ব্যবহারিক পাঠদান অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ার পর কালক্ষেপণ না করে তার চূড়ান্ত মূল্যায়ন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। শুধু যেসব ব্যবহারিক কোর্সে হাতে-কলমে কাজ করা ছাড়া পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তা অবশ্যই সুবিধাজনক সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে সম্পন্ন করতে হবে।
২. মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে সব বিষয়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীর সত্যিকারের মেধা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে চলমান পদ্ধতি ও স্কেল গ্রেড প্রদান করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের জন্য উপযোগী অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুস্পষ্ট পদ্ধতি গ্রহণ করবে এবং বাস্তবতার নিরিখে সব সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করবে।
৪. যেকোনো তত্ত্বীয় বিষয় এবং হাতে-কলমে কাজ করার প্রয়োজন নেই, এমন ব্যবহারিক বিষয়ে চূড়ান্ত নম্বর অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে প্রদান করা যেতে পারে।
৫. ব্যবহারিক ক্লাসের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টের ভিডিও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ইমেইলে এক্সপেরিমেন্টের পুরোনো ডেটা প্রেরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এসব ডেটা অ্যানালাইসিস করে সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে প্রদান করবে।
৬. ল্যাবভিত্তিক নয় এমন থিসিস অনলাইনে সুপারভিশন করা যেতে পারে। ল্যাবভিত্তিক থিসিসের সুপারভিশন যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনলাইনে হতে পারে। থিসিসের হার্ডকপি গৃহীত হওয়ার পর অনলাইনে ভাইভা নেওয়া যেতে পারে।
৭. অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট প্রাপ্যতা ও প্রয়োজনীয় স্পিড নিশ্চিত করা দরকার। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাতে পারে।