করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ৫ এপ্রিল শুরু হয়েছে লকডাউন। চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এর দুই দিন পর ১৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা লকডাউন শুরু হবে। এ লকডাউন অনেক কঠোর হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দুই লকডাউনের মাঝে ১২ এবং ১৩ এপ্রিল দুই দিন সবকিছু খোলা থাকবে। এ দুই দিনে রাজধানী ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
দ্বিতীয় দফা লকডাউন ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পর পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে লকডাউনের সময়সীমা বাড়তে পারে।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউকালে এ ভাইরাসে আক্রান্তদের উপসর্গ ভিন্ন রকমের। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সরকার বাধ্য হয়ে পর পর দুই দফা লকডাউন দিচ্ছে। দুই লকডাউনের মাঝে দুই দিনের বিরতি আছে। অন্যদিকে, আগামী ১৪ এপ্রিল দ্বিতীয় লকডাউনের প্রথম দিনেই শুরু হবে রোজা।
গত ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৫ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের কথা জানান। এর পর থেকেই সাধারণ জনগণ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। লকডাউন, কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, সব মিলিয়ে লাখ লাখ মানুষ বাসে, ট্রেনে আর লঞ্চে করে শহর ছেড়েছে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
১৪ এপ্রিল থেকে পুনরায় লকডাউনের কথা শোনার পর থেকে আবারও দলে দলে মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করেছে। সরকারি আদেশের কারণে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বাস চলাচল বন্ধ আছে। কিন্তু গ্রামমুখী মানুষের স্রোত থেমে নেই। তবে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে। গাদাগাদি করে যাচ্ছে তারা।
সরাসরি বাস না চলায় ভেঙে ভেঙে শহর ছাড়ছে মানুষজন। কেউবা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে করে যাচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও অনেক পরিবারকে বাড়ির পথে রওয়ানা হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী এবং ফকিরাপুল এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১২ এবং ১৩ এপ্রিল লকডাউন না থাকায় ওই দুই দিনের টিকিট চাচ্ছে অনেক মানুষ। কিন্তু এই দুই দিনে আন্তঃজেলা বাস চলবে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি বলে তারা বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপক শংকর সাহা বলেন, `প্রচুর লোকজন ফোন করছে। সরাসরিও আসছে টিকিটের জন্য। সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আমরা টিকিট দিচ্ছি না। আশা করছি, কাল নাগাদ সিদ্ধান্ত হবে, তখন ১২ এবং ১৩ এপ্রিলের টিকিট দেওয়া শুরু করব।’
সেন্টমার্টিন পরিবহনের পরিচালক মাহবুবুল আলম জুয়েল বলেন, ‘যারা ১২ এবং ১৩ তারিখের টিকিটের জন্য আসছেন বা ফোন করছেন, সবার ফোন নম্বর লিখে রাখছি। সিদ্ধান্ত হলেই তাদেরকে ফোন করে টিকিট দেব। আমাদের যাত্রীদের বেশিভাগই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি আর খাগড়াছড়ির।’`
হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আশফাক আহমেদ বলেন, `দেশের প্রায় জেলাতেই আমাদের গাড়ি চলে। এখন লকডাউনের কারণে বন্ধ আছে। আশা করছি, ১২ এবং ১৩ এপ্রিল সারা দেশে ২৪ ঘণ্টা বাস সার্ভিস দিতে পারব। আগামীকাল (১১ এপ্রিল) থেকে আমরা টিকিট ছাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী।‘
এদিকে সরেজমিনে টঙ্গী, গাজীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার লোক বাস, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে বাড়ির পথে রওয়ানা হয়েছে। এই রুটের বেশিরভাগ মানুষ বাসে আব্দুল্লাহপুর গিয়ে সেখান থেকে অটোরিকশা, মাইক্রোতে করে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এসব রুট দিয়ে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জে যাচ্ছে যাত্রীরা।
আগামী ১২ এবং ১৩ এপ্রিল আন্তঃজেলা বাস চলার অনুমতি দেবে কি না, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি কোনো পরিবহন মালিক বা কর্মকর্তা। তবে অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা আসতে পারে।