বৈশ্বিক মহামারী নোভেল করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার ভারতীয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতায় অবশেষে তাদের ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
দেশটির গণমাধ্যমের দাবি- বাংলাদেশে থাকা তাদের ‘আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসেছিলেন’ এসব ভারতীয়। কিন্তু মার্চের শেষের দিকে করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন ঘোষণায় তারা এখানে আটকে পড়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ ভারতীয় অবস্থান করছেন সীমান্তের কাছে যশোর ও খুলনায়।
দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল হয়ে লোকজনকে কঠোর নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে, কিন্তু আটকে পড়া এসব মানুষের বেশির ভাগই সে সব নিয়মকানুন সম্পর্কে জানেন না। ফলে কীভাবে ফিরতে হবে তার আয়োজনও করতে পারছেন না তারা। এ জন্যই তারা সহায়তা চেয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার কারণে এসব মানুষের টাকা পয়সাও শেষ হয়ে আসছে। এ অবস্থায় তাদের অনেকের কাছ থেকে আবেদন পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। অনেক আটকে পড়া মানুষ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। এসব আবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লকডাউন আরোপ করার পর থেকে লোকজনকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে শুধু বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে। এক্ষেত্রে কয়েক দফা চেক করা হচ্ছে। এ কথা বলেছেন রাজ্যের সিনিয়র এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, গত ৩০ দিনে এই সীমান্ত দিয়ে মাত্র ৪০ জনকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এসব মানুষকে ফেরত নেয়ার জন্য সব আয়োজন নেয়া হয়েছে। এ জন্য তাদের প্রয়োজন একটি কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট। এই সার্টিফিকেট ৯৬ ঘন্টার জন্য বৈধ থাকবে।
রাজ্য সরকারের এক কর্মকর্তা জানান, এ জন্য এসব মানুষকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমান্ত অতিক্রম করতে হচ্ছে। যেসব ভারতীয় বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে চান তাদেরকে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। এ জন্য তারা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশি একজন কূটনীতিক বলেছেন, গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশ সরকার একটি নোটিফিকেশন ইস্যু করেছে। তাতে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট দেশে যদি বাধ্যবাধকতা না থাকে তাহলে বিদেশ সফরের সময় বিদেশি নাগরিকদের কোভিড-নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রয়োজন নেই।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, আটকে পড়া ওই দুই হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টিনে নিতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তাদেরকে হাসপাতালেও নেয়া হতে পারে। কিন্তু সীমান্তের কাছে নিরাপদ কোনো ভাল স্থান নেই।
লোকসভা নেতা ও পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়্যারম্যান অধীর চৌধুরী বলেছেন, এ ইস্যুতে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। এরই মধ্যে মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু অধিবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন পেয়েছেন তারা। এসব মানুষ মার্চের শেষের দিকে বাংলাদেশে এসেছেন। তারপরই তারা আটকা পড়েছেন।
এ বিষয়ে অধীর চৌধুরী বলেন, এ নিয়ে আমি কথা বলেছি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব রাজিব সিনহার সঙ্গে। লোকজন এখন হতাশার মধ্যে রয়েছে। কারণ, কয়েক মাস তারা বাড়িছাড়া। কেউ কেউ বাংলাদেশে নিকট আত্মীয়দের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ফলে এখন প্রায় ৫ মাস তারা দেশের বাইরে।
বাংলাদেশি কূটনীতিক বলেন, সীমান্তের কাছে অনেক ভারতীয় দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষায় আছে বলে তাদের কাছে রিপোর্ট আছে। এসব মানুষের বেশির ভাগের হাতে টাকা পয়সা নেই। প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা নেই। দেশে ফিরতে হলে তাদেরকে এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। তাই ভারত সরকারের উচিত তাদের সাহায্য করা।