বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার দুর্গম, অস্থিশীল চরাঞ্চলে একের পর এক আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্রমাগত প্রকল্প নদীতে বিলীন হচ্ছে। সরকার ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসহায় মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য উল্লেখিত মহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। কিন্তু কোনো প্রকার সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এবং দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভাবে যমুনার দুর্গম, অস্থিতিশীল চরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে অল্প সময়ে প্রকল্প নদীতে বিলীন হচ্ছে এবং পুর্নবাসিত পরিবারগুলো আবার গৃহহীন হয়ে পড়ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর থেকে নদী পথে ১০-১২ কিলোমিটার দূরত্বে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের যমুনার বিরামের পাঁচগাছি চরে (মৌজায়) নির্মাণ করা হয়েছে এমনি একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প। জানা গেছে, ২ বছর আগে ওই চরে প্রায় ১৫/২০ বিঘা জমির উপর কয়েক শত মেট্রিক টন চাল/গম ব্যয়ে বালু ভরাট করে নির্মাণ করা হয় প্রকল্প। প্রকল্পে ৭৯টি সেমিপাকা ঘর (প্র্রতি ঘরে বরাদ্দ ২ লাখ ৪০ হাজার) নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা হয় ৭৯টি পরিবারকে। দুর্গম চরে ওই প্রকল্পে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পটি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। প্রকল্পের জায়গায় একটি এনজিওর করে দেওয়া কয়েকটি বাংলা ঘর এবং একটি মসজিদ ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন। সেমিপাকা ঘরগুলো নদীতে ভেঙ্গে পরা সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রকল্পে ১০/১৫টি পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। আর বাকি ঘরগুলো তালাবদ্ধ। জানা গেছে, বন্ধ ঘরের লোকজন স্বচ্ছল। তারা জনপদ এলাকায় বসবাস করেন। এ ব্যাপরে ইউএনও তৌহিদুর রহমান জানান, যারা প্রকল্পে স্থায়ীভাবে থাকে না, তাদের কবুলিয়ত বাতিল করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে গেলে কথা বলার জন্য কোনো পুরুষ মানুষ পাওয়া গেল না। গাছপালা বিহীন খাঁ-খাঁ বালু চরের গোল ঘরে কয়েকজন নারী বসে ছিলেন। তারা জানালেন, বাড়ির কর্তা-ব্যাক্তিরা মাঠে গরু-ছাগল চড়াতে গেছেন। অনেকে গেছেন নদীতে মাছ ধরতে। প্রকল্পের বাসিন্দা গুলেজা বেগম(৩৫), জাহানারা বেগম(৬৩), বেদেনা(২৭), তহমিনা খাতুন(২৫), শরিফুন(২৯) জানালেন তাদের নানা দুঃখ বেদনার কথা। প্রকল্প ভেঙ্গে গেলে তারা কোথায় আশ্রয় নেবেন, কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তাদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ। এ ব্যাপাবে চালুয়া বাড়ি ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা বলেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে ওই প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। তাই কোনো কিছু বলতে পারব না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান জানান, ‘আমি এখানে যোগদানের পূর্বে দুজন ইউএনও পর্যায়য়ক্রমে প্রকল্প কাজ বাস্তাবায়ন করেছেন। এখন প্রকল্প ভাঙনের মুখে। আমি এর দায় দায়িত্ব নিতে পারি না। তাই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। পিডি অফিসে চিঠি দিয়েছি। তবে প্রকল্প রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আশ্রয়েণের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ্ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ এবং ম্যাসেজ পাঠিয়েও তার মতামত পাওয়া যায়নি।