মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ নির্বাচন। ক্ষমতায় যেতে চাইলে আগামী ২০২৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
আজ রোববার শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষ্যে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রহমান বলেন, সম্ভাবনার এই বাংলাদেশকে কেউ হত্যা করতে চাইলে তা বরদাশত করা হবে না। এই বাংলাদেশে নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস করে কেউ যদি ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহলে সে স্বপ্ন হবে দিবালোকের স্বপ্ন। ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ নির্বাচন। ক্ষমতায় যেতে চাইলে আগামী ২০২৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু মেট্রো রেল জ্বালিয়ে, পদ্মা ব্রীজ, সেতু ভবনে অগ্নিসন্ত্রাস, সরকারি স্থাপনা ধ্বংস করে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালেই ছাত্রদের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকুরিতে কোটা বাতিল করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট সে আদেশ বাতিল করলে সরকারই আপীল বিভাগে আপীল করে। এরপর সরকার শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার উদ্যোগ নিলে আপীল বিভাগ শুনানির তারিখ এগিয়ে এনে ছাত্রদের দাবী অনুযায়ী কোটা সংস্কার করে। সরকার আন্তরিক ছিল বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে এটা করা সম্ভব হয়েছে। যারা আন্দোলন করছিল এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বরং উৎসব করা উচিৎ। কারণ তাদের দাবীর চেয়েও তারা বেশি পেয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আজকে কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে কোমলমতী ছাত্রছাত্রীদেরকে ব্যবহার করে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিরা দেশ বিরোধী শে¬াগান দিয়ে মেট্রো রেল, পদ্ম সেতু, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিস, সেতু ভবন, হানিফ ফ্লাইওভারসহ সরকারি স্থাপনা ও সম্পদ ধ্বংস করেছে। অর্থাৎ কোটা আন্দোলন নয় বরং তাদের ইস্যু ছিল সরকার পতনের আন্দোলন। তারা সরকার পতন ঘটাতে চেয়েছিল। তারা ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার এবং আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে নৈরাজ্য করে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। একাত্তরের পরাজিত পুরনো শক্তির নতুন কায়দায় ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। বিদেশ থেকে অর্থের যোগান দিয়ে এবং বিশ্বব্যাপি গুজব রটিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়া হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনই হলো আমাদের জীবনের অঙ্গীকার। এই শপথ নিয়েই শেখ হাসিনা আজ দেশের চৌহদ্দি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। শেখ হাসিনা আছে বলেই বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবেই নয় বরং এ দেশ হবে পৃথিবীর উন্নত দেশের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। আমরা এ উন্নয়নকে ধুলায় লুটিয়ে যেতে দেব না।’
এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে আব্দুর রহমান বলেন, ‘তিন বার ক্ষমতায় গিয়েও আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি, বরং ফরিদপুরের তিন উপজেলার বিরোধী পক্ষও শান্তিতে আছে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও সুসম্পর্ক বজায় রেখেই রাজনীতি করতে চাই। এই জনপদকে শান্তির জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সারাদেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালিতে তারা কোন কর্মসূচি দেননি এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আগামীতেও এভাবে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান বজায় রাখার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি আহবান জানান।’
তিনি ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অশুভ শক্তির মোকাবেলার আহবান জানান। রাজনীতির নামে যে কোন ধরণের নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস করে ফরিদপুরের তিন উপজেলায় অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহত করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশের সংকটকালে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও তৃণমূল ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রতিটি কর্মীকে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ তিন উপজেলার উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে, তবে তাই হবে সারা বাংলাদেশের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত।’
সভায় বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন সভাপতিত্ব করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মীরদাহ পিকুলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও মেয়র সেলিম রেজা লিপনসহ উপজেলার জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে মন্ত্রী আব্দুর রহমান উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তরের আয়োজনে কয়েকটি পুকুর এবং জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।