ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা ততই বাড়ছে। আর সেই সাথে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। জেলা উপজেলার বিভিন্ন বিপণি বিতানের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। সরেজমিনে শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত মার্কেট গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বড় বাজার, ছোট বাজার, মোক্তার পাড়া, পৌরসুপার মার্কেট, আনন্দ বাজার মোড়ে ইফতারের পর ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। নিজের পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতারা ছুটে যাচ্ছেন এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে। এদিকে ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখছেন না বিক্রেতারা। এছাড়াও ফুটপাতের মৌসুমি ও ভ্রাম্যমাণ দোকান গুলোতেও নিম্নবিত্ত মানুষদের ভীড় চোখে পড়ার মতো। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ বাজারে এসেছে দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আধুনিক ডিজাইনের আকর্ষণীয় পোশাক। নারী ক্রেতাদের কাছে বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ছেলেদের পাঞ্জাবি ছাড়াও শার্ট, গেঞ্জি, জিন্স প্যান্টের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবছর পোশাকসহ সকল পণ্যের দাম বেশি বলে দাবি করেছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, কোন পোশাক পছন্দ হলেই দামের সাথে বাজেট না মেলায় কেনা সম্ভব হচ্ছেনা। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর দ্রব্যমূল্যের দামে সবাই দিশেহারা। সেই তুলনায় জামা, জুতা, কসমেটিক্স সহ সব কিছুরই দাম একটু বেশি। জেলা শহরের বড় বাজারের ভরসা বস্ত্রালয়ের মালিক লিটন সাহা জানান, গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতাদের সামর্থ্যের মধ্যেই বেচাকেনা চলছে। তবে সারারা-গারারা, কাঁচা বাদাম, কাতান, ইন্ডিয়ান থ্রি-পিস সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। শাড়ির মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে খাড্ডি বেনারসি, চেন্নাই সিল্ক, নতুন কানজিবরণ, বুটিক, ক্রেপসি, মন্দানি, জামদানি ও মহারাষ্ট্র। এছাড়া লেহেঙ্গার চাহিদাও বেড়েছে বেশ। ঈদের পোশাক কিনতে আসা ক্রেতা মারিয়া জাহান বলেন, অফিস থাকায় সপ্তাহের অন্যান্য দিনে মার্কেটে আসতে পারি না। শুক্র-শনি দুই দিন ছুটি থাকায় আসতে পেরেছি। সবার জন্য কেনাকাটা এখনও সম্পন্ন করতে পারিনি। সোমবার অফিস ছুটির পরে ইফতার শেষ করে বাকি কেনাকাটা শেষ করে ফেলবো। তবে আজ মার্কেটে মানুষের অনেক ভিড়, তাই মার্কেটে ঘুরতে একটু কষ্ট হয়েছে। অপরদিকে, নগরীর বিপণী বিতানের পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলোর হাট-বাজারের শপিং মলগুলোতে ঈদের কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। বারহাট্টা সদরের সাবিত্রী বস্ত্র বিতানের মালিক আরাধন পাল বলেন, ঈদের সময় মানুষজন তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য শাড়ি নিয়ে যায়। সেজন্য আমরা সব বয়সি মহিলাদের ব্যবহার উপযোগী শাড়িই রাখি। বেচা-কেনা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ঈদের আগে আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। ব্যবসাতো রোজার ঈদেই হয়। কোরবানির ঈদে ক্রেতারা তেমন কাপড়-চোপড় কিনেন না। ভাটি এলাকার রাজধানী খ্যাত মোহনগঞ্জ পৌর শহরের হাওর ফ্যাশনের মালিক বলেন, গত সপ্তাহের শেষ দিকে ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন, ঘুরছেন, পছন্দমতো কাপড় কিনছেন। ঈদ উপলক্ষ্যে ক্রেতাদের যেন পছন্দ এমন সব কালেকশন দোকানে তুলেছি। নেত্রকোনা চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি ওয়াহেদ মিয়া বলেন, করোনা পরবর্তী বাজার শুরু হলে বৈশ্বিক কারণে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে বিপণিবিতানগুলোতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কাজ থেকে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের বাজার তদারকি আরো বাড়ানোর দাবি করেন তিনি। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের আহমেদ জানান, জনগণের জানমাল রক্ষায় আমরা পুলিশ প্রশাসন সব সময় সতর্ক আছি। ঈদকে সামনে রেখে শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতান, দোকান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ টহল দিচ্ছে। এছাড়া যানজট নিরসনেও বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ।