যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় গ্রামের মাঠে-ঘাটে, গাছে-গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা পাখির দেখা মেলে ভার। পাখির কলরবে মুখরিত গ্রাম এখন প্রায় পাখি শূন্য। বন-জঙ্গলের অপরূপ দৃশ্যপট এখন বদলে গেছে। পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র, খাদ্য সঙ্কট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে প্রায় বিলুপ্তির পথে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ আমাদের দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি। ঝিকরগাছা উপজেলার ৫নং পানিসারা ইউনিয়নের টাওরা গ্রামের ছিদ্দিক মোড়ল বলেন, কয়েক বছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙতো পাখির ডাকে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হয়ে যেতো আমাদের কর্মব্যস্ততা। কিন্তু দিন দিন পাখির ডাক হারিয়ে যাচ্ছে, এখন গাছ-গাছালিতে আর পাখির ডাক নেই। আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার সাথে পাখির যে যোগ, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। সরেজমিনে ঝিকরগাছা উপজেলার বর্ণি, টাওরা, সৈয়দপাড়া, আজমপুর, বল্লাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রবীণদের সাথে কথা বললে তারা জানান, পাখির কিচিরমিচির শব্দে শিহরণ জাগানো সেই সুর এখন আর শোনা যায় না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাঁশের ঝাড়, আমের বাগান, বাড়ির ছাদে যেসব পাখি সব সময় দেখা যেত, ওই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি পাখি গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর চোখে পড়ে না। পাখি প্রিয় অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাঁচায় বন্দি করে কয়েক প্রজাতির পাখি পালন করতে দেখা যায়।দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম পাখি দেখতে পায় না, তারা তো অনেক পাখি চেনেই না। তাছাড়া শিকারিদের দৌরাত্ম্যে পাখিশূন্য হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে পাখি প্রেমীরা বাড়িতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন। যাতে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানতে পারে। পাখির আবাসস্থল গাছ কাটার প্রভাব, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, বনাঞ্চল উজাড়, পাখি শিকার, পাখির মাংশের ব্যবসা ইত্যাদি কারণে অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে বলে মনে করছেন সমাজের সচেতন মানুষরা। বিভিন্ন মৌসুমে পাখি শিকার এবং পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে অনেক পাখিই চলে যাচ্ছে অন্যত্র। পাখি শিকার বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা সচেতন মহলের।