জিনের আছড় লেগেছে এই অভিযোগে মাদ্রাসা পড়ুয়া ৮ বছরের এক শিশুকে হাত ও পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও হাতের আঙুলে আগুনের ছ্যাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার হুজুরের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরা সদরের ধূলিহর ইউনিয়নের কাছাড়ীপাড়া এলকার সুমাইয়া খাতুন হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানায় ওই ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকিতে আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি ভূক্তভূগির পরিবার। বরং সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ওই শিশুকে। ভূক্তভূগী শিশু আবু হুরায়রা ধূলিহর ইউনিয়নের বেড়বাড়ী এলাকার হাবিবুর রহমানের পুুত্র। ঘটনার তিনদিন পর সরেজমিনে আবু হুরায়রার বাড়িতে যেয়ে দেখা যায়, শিশু আবু হুরায়রার সমগ্র শরীরে লাঠির আঘাতে কালশিরা পড়ে গেছে। বিশেষ করে দুই পায়ের উরুতে লাঠি দিয়ে পিটানোর চিহ্ন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তার ডান হাতের বুড়ো আঙুলে দেওয়া হয়েছে আগুনের ছ্যাকা। আগুনের ছ্যাকায় বুড়ো আগুলে ফসকা পড়ে কালো হয়ে গেছে। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশু আবু হুরায়রা। এসময় শিশু আবু হুরাইরা বলেন, আমার ঘাড়ে জিন লেগেছে বলে সন্ধার পর রুমের দরজা বন্ধ করে হুজুর আমার হাত ও পা বেঁধে মোটা নিমের ডাল দিয়ে আমাকে অনেক মেরেছে। মোমবাতিতে আগুন ধরিয়ে আমার আঙুলে ছ্যাকা দিয়েছে। আমার মা বাপ গেলে তাদের কিছুই বলিনি। পরে আমাকে বাড়ি নিয়ে আসে আমার মা বাপ। আমার কোন জিনের দোষ নেই তাও হুজুর আমাকে মেরেছে। আবু হুরাইরার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন আবু জামায়াত হুজুর। ছেলেকে মারপিট করলেও আমাদেরকে জানানো হয়নি। আমাদের বলেছে আবু হরাইরার জিন লেগেছে। ওই রাতে তাকে বাড়ি নিয়ে এসে দেখি তার শরীরে অসংখ্য মারের চিহ্ন। আঙুলটা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে এনেছি। এখন বাড়িতে তার চিকিৎসা চলছে। আপনারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আর এখানে আমাদের কেউ নেই। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিলে এখানে বসবাস করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল অহাবের ভাগনে মাদকাশক্ত বাদশা তোড়জোড় শুরু করেন। আইনের আশ্রয় যাতে না নেওয়া হয় সেজন্য বাদশা আবু হুরায়রার পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি এখনও হুমকি দিচ্ছেন। হুজুরের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বাদশা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই অবুঝ ছোট বা”চাটিকে যিনি মেরেছেন ও যারা এই ঘটনাটি ধামাচাপা দিচ্ছেন আমরা তাদের শাস্তি দাবী করছি। এ ব্যাপারে জানার জন্য মাদ্রাসায় গেলে হুজুরকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থী আবু হরায়রাকে ঘরের দরজা দিয়ে হাতপা বেঁধে মারপিট ও আঙুলে আগুনের ছ্যাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে সাংবাদিকরা মাদ্রাসায় এসেছেন শুনেই সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মাদ্রাসায় দ্রুত হাজির হয়ে বাদশা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বাদশা। আপনারা এখানে কি করতে এসেছেন। এক্ষুণি চলে যান। যা হয়েছে তা মিটে গেছে। আমি বাদশা বলছি আপনারা চলে যান। এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার স্বত্ত্বে জানায় একটি সুবিধাভোগী মহল বিষয়টিকে ধামা চাপা দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। মাদ্রাসার হুজুর ও সভাপতির পক্ষ নিয়ে গোপনে তারা ভুক্তভোগীর পিতা-মাতার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। যাহাতে তাহা কোন প্রকার আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে না পারে। ধূলিহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হাসানুজ্জামান বলেন, তিনদিন পর বিষয়টি আমাকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আমি ভিকটিমের বাড়িতে যেয়ে দেখে এসেছি। এ ব্যাপারে ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।