ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালানোর মধ্য দিয়ে ঢাকা শহরের লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ও রুজির ব্যবস্থা হয়। বিভিন্ন সময়ে সরকার দেশের এই প্রান্তিক শ্রমজীবী গরিব মানুষের পেশা বন্ধ করার পাঁয়তারা করে এদের ওপর জুলুম চালিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও একই নীতির প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। সরকার একদিকে ইনক্লুসিভ দেশ গড়ার কথা বলছে, অপরদিকে ফ্যাসিস্ট আমলের নীতিতে গরিবের পেটে লাথি মারার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, গরিবের পেটে লাথি মেরে ইনক্লুসিভ দেশ হয় না। ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চলাচলে বাধা প্রদান ও ব্যাটারি জব্দের প্রতিবাদে সোমবার, সকাল ১০টায় রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়ে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন শ্যামপুর থানার সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের সভাপতিত্বে ও যাত্রাবাড়ী থানার সভাপতি মো. রিপন হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম নাদিম, কোষাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম সমীর, মো. আলী, শ্যামপুর থানার সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান রাকিব, যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর-কদমতলী-গেন্ডারিয়া অঞ্চল সমন্বয় কমিটির অন্যতম নেতা আব্দুল কাদের, সাকিব হোসেন প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, চারশ’ বছরের অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বসবাসের অনুপোযোগী ঢাকা তৈরি হয়েছে। এর দায় নগর পরিকল্পনাকারীদের। পরিকল্পিত নগরায়ন না করে সমস্যার দায় গরিব-মেহনতি রিকশা চালকদের ওপর চাপিয়ে তাদের রুটি-রুজি বন্ধের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। উচ্চ বেকারত্বের দেশে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নেওয়ার এই পরিকল্পনা রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী হবে। সম্মিলিত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সবার জন্য বসবাস উপযোগী ঢাকা নির্মাণে পরিকল্পিত নগরায়ন প্রয়োজন এবং পরিকল্পনা গ্রহণের শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সমাধান করতে হবে। সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স ও যৌক্তিক রুট পারমিট প্রদান করা এবং চালকদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের মধ্য দিয়ে একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে। একইসাথে সড়ক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতি গ্রহণে রিকশা শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সকলের বসবাস উপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে শ্রমিক প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের জোর দাবি জানান বক্তারা। বিআরটিএ কর্তৃক লাইসেন্স ও যৌক্তিক রুট পারমিট প্রদান, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, ট্রাফিক ও পুলিশের জুলুম-নির্যাতন বন্ধ, গাড়ি আটক ও ব্যাটারি জব্দ বন্ধ, রিকশার যন্ত্রাংশের দাম কমাতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ৫ দফা দাবিতে সমাবেশ শেষে একটি বিশাল লাল পতাকার মিছিল উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), ওয়ারী জোন কার্যালয়ে যায়। এসময় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নাদিমের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আনোয়ার ও অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার (ক্রাইম) মো. ইসলামের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে স্মারকলিপি প্রদান করেন।