দুয়ারে কড়া নাড়তে শুরু করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহোৎসব সামনে রেখে রামগঞ্জ উপজেলায় কাদামাটি, খড়-কাঠ আর প্রতিমা নিয়েই দিন কাটছে কারিগরদের। নিখুঁত ভাবে কাজ ফুটিয়ে তুলতেই সর্বোচ্চ মনোযোগ শিল্পীদের। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার মহাষষ্ঠীতে পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ মহোৎসব শুরু হবে। ১২ অক্টোবর শনিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের উৎসব। ইতমধ্যে অনেক মন্ডপে মাটির কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে শিল্পীরা। মূর্তি গড়া শেষে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিমা। দেবীকে স্বাগত জানাতে সর্বত্র আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। সনাতন ধর্মবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে ঘিড়ে হিন্দুপাড়াগুলোতে আগাম শারদীয় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। উঁচু-নিচুর বিভেদ ভুলে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্র করে মহাসমারহে এ উৎসব পালন করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দুর্গাপূজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জা। প্রতিটি মন্ডপের জন্য তৈরি হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গনেশ,কার্তিক, অসুর, সিংহ, হাস, পেঁচাসহ বিভিন্ন প্রতিমা। অধিকাংশ মন্ডপে কারিগরেরা রং আর সাজসজ্জায় ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গার পূর্ণ অবয়ব। বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে মন্ডপগুলোতে ত্রিপলের ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মন্ডপে চলছে সাজসজ্জা। শেষ মুহূর্তে চলছে তুলির আঁচড়ে দেবী প্রতিমাকে পূর্ণ রূপ দেয়ার ব্যস্ততা। রং তুলির আঁচড়ে সুনিপুণ ভাস্কর্য। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি যুগের সনাতন ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, পৌরাণিক কাহিনি ও পার্বণের ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করার অনন্য আয়োজনে প্রতিমা নির্মাণ। অপরূপ সাজসজ্জা আর আলোর খেলায় তা হয়ে উঠছে মনোমুগ্ধকর। মন্ডপের সামনে বিশাল জলাধারে কৈলাস পর্বতের চূড়ায় ধ্যানমগ্ন মহাদেব। তারই জটায় মা গঙ্গা ঝরনারূপে নেমে আসছে। পাদদেশে রাম, সীতা, লক্ষ্মণ আর ভক্ত হনুমান। পর্বতের চূড়ায় মেঘের ভেলা। পুকুরে ভাসমান পদ্ম আর হংসের নান্দনিক উপস্থাপন। ডিজিটাল আলোকসজ্জার অসাধারণ আবহ শিল্প মাধ্যমের অপূর্ব সংযোজন। বেশির ভাগ মন্ডপে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে এই দুর্গাপূজা। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে জোরেসোরেই চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। বিভিন্ন জেলায় পূজামন্ডপে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। এরই মধ্যে দেশজুড়ে বিভিন্ন মন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। সরেজমিন প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততার চিত্র দেখা গেছে। প্রতিমা শিল্পীদের নিপুণ আঁচড়ে তৈরি হচ্ছে এক একটি প্রতিমা। অতি ভালোবাসায় তৈরি করা হচ্ছে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, অসুর ও শিবের মূর্তি। কয়েকজন প্রতিমা তৈরির শিল্পী জানান, ‘প্রতিমা তৈরি করা অনেক কষ্টের। আর আগের মতো লাভ অয় না। তার পরও করতে হয়। প্রতিমা গড়া শেষ হলে রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেছে অবয়ব। ফুটিয়ে তোলা হবে নাক-চোখ-মুখ। রামগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমীর রঞ্জন সাহা, সাধারন সম্পাদক পিযুষ কান্তি সাহা লিটন আঙ্গার পাড়া অভয় পাটোয়ারী বাড়ির দুর্গা মন্ডপের সাধারন সম্পাদক শংকর রায় জানান, এবার রামগঞ্জে মোট ১৮টি পূজা মন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। তবে উপজেলার সবচেয়ে বড় পূজা মন্ডপটি হবে পৌরসভার রতনপুরের বলদেব জিউ-র মন্দিরে। এ উপজেলায় সব ধর্মের লোকের সহযোগিতায় আনন্দমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হয়। দুর্গাপূজাসহ সব পূজায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে উদযাপন করতে স্থানীয় লোকজন, থানা ও উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতা লক্ষণীয়। রামগঞ্জ থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার জানান দূর্গাপূজা উপলক্ষে প্রশাসন তিন স্তরের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলা করতে প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।