
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয় এবং নীরব এলাকা বাস্তবায়ন অগ্রগতি’ বিষয়ক এক কর্মশালা বুধবার সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ ফিরোজ শাহ। খুলনা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের সম্বন্বিত যৌথ আয়োজনে ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় কর্মশালাটির অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখতে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই। আমাদের সকলের সচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি আমাদের চারপাশের বিভিন্ন উৎস হতে অনেক সময় উচ্চমাত্রার শব্দের উৎপন্ন হচ্ছে। যেমন হাতে থাকা মোবাইল ফোনের উচ্চশব্দের রিংটোনের শব্দ, নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিতে গলিতে ভ্রাম্যমান বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের গাড়ি ও ভ্যানযোগে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে বিকট শব্দে বিক্রয়ের ফলে পাড়ায় মহল্লার জনসাধারণ শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । উক্ত অনুষ্ঠানে আরোও জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ মানুষ এখন শব্দদূষণের কবলের শিকার হচ্ছে। সে মোতাবে মানবদেহের ৩০টি কঠিন রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে শব্দদূষণ। এছাড়াও ৫০ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ মানবদেহে উচ্চ রক্তচাপ, ৬৫ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ হৃদরোগ সৃষ্টিকারী, ৯০ ডেসিবলের বেশি উচ্চ শব্দ স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং ১২০ ডেসিবলের চেয়ে উচ্চ শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকি শব্দদূষণের আওতার মধ্যে গর্ভবতী নারী ও থাকলে বধির সন্তানের জন্মের দিতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে জানা যায় । এছাড়াও শব্দদূষণের কারণে মাথাব্যথা , আতঙ্ক-অবসাদগ্রস্ত হওয়া, অনিদ্রা ও শিশুদের মেধার বিকাশ ব্যাহত হয়। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী নীরব ঘোষিত এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবল ও শিল্প এলাকায় সর্বোচ্চ ৭৫ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টির সুযোগ নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের জরিপে খুলনা শহরের কিছু কিছু স্থানে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ১৩২ ডেসিবল পর্যন্ত শনাক্ত করা হয়েছে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুযায়ী নীরব ঘোষিত এলাকায় হর্ন বাজানো দন্ডনীয় অপরাধ। আবাসিক এলাকার পাঁচশত মিটারের মধ্যে শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘন্টা মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। অনুমতি ব্যতীত শব্দ সৃষ্টি করলে প্রথমবার অপরাধের ক্ষেত্রে একমাস কারাদন্ড এমনকি অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং পরবর্তীতে প্রতিবার অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড আরোপ করা যেতে পারে। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে উক্ত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ সাজিদ হোসেন, উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ কাজী আবু রাশেদ। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনার বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন। উক্ত অনুষ্ঠানে এ সময়ে আরোও বক্তৃতা করেন খুলনা (কেসিসি)’র প্যানেল মেয়র-২ মোঃ আলী আকবর টিপু, সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ, এসএম জাহিদ হোসেন, কেসিসি’র ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনসহ প্রমুখ। উক্ত কর্মশালায় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, মসজিদের ইমাম ও গণপরিবহনের চালকরা এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।