
সাতক্ষীরায় প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান। গত ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিক ভাবে এবছরের গুড় পুকুরের মেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। গুড় পুকুরের মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মানিক সিকদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গুড় পুকুরের মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দীন, পৌর প্যানেল মেয়র-২ শেখ আনোয়ার হোসেন মিলন, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী, পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম, পৌর কাউন্সিলর শেখ শফিক উদ দৌলা সাগর, শেখ মারুফ আহম্মেদ, আইনুল ইসলাম নান্টা, মহিলা কাউন্সিলর নুর জাহান বেগম নুরী, অনিমা রাণী মন্ডল প্রমুখ। এবারের মেলায় প্রায় তিনশোর অধিক স্টল বসেছে। দোকানীরা তাদের পরসা সাজিয়ে বসেছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য। বাংলার আবহমান কালের সকল গ্রাম্য মেলার মতোই এই মেলায় বিভিন্ন জিনিসের পসরার মধ্যে আছে, কাঠ, মাটি, বাঁশ, বেত আর লোহার সামগ্রীতে ঠাসা এই মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে সাতক্ষীরার নানা প্রজাতির কলম-করা-গাছগাছড়া।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন স্টেশনারী পণ্যের বিক্রেতারা। কলম-করা-চারা আর আসবাবপত্র ছাড়াও মেলায় থাকে শিশুদের বিভিন্ন খেলনা; থাকে বিভিন্ন মৌসুমী ফল, থাকে গৃহস্থালী উপকরণ ঝুড়ি, ধামা, কুলা, বাটি, দেলকো, শাবল, খোন্তা, দা, ছুরি, কোদাল প্রভৃতি। এছাড়া বিনোদনের জন্য থাকে ম্যাজিক নৌকা, নাগোরদোলাসহ বিভিন্ন আয়োজন; যাদু প্রদর্শনী, পুতুল নাচ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। গুড়পুকুরের মেলা বা গুড়পুকুর মেলা, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা, যার বয়স প্রায় ৩শ বছর বা তার অধিক বলে অনুমিত হয়। সাধারণত আগে সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল স্কুলের মাঠ আর পলাশপোল গ্রামই হলো মেলার মূল কেন্দ্রস্থল। কিš‘ বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ভাদ্র মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলা একমাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। একসময় কলকাতা, ও লন্ডন থেকে ব্যবসায়ীরাও এই মেলায় আসতেন বলে বলেন মেলা উদযাপন কমিটিরা বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের মধ্যে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবকে কেন্দ্র করে এই মেলা অনুষ্ঠিত হলেও সাতক্ষীরা শহরবাসীর জন্য এই মেলা হয়ে উঠছে গরিব-ধনী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক মিলনমেলা। মেলায় অশ্লীল নৃত্য, জুয়া খেলা, হাউজি ও লটারি খেলাকে স্থানীয় প্রশাসন নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি যাত্রাও সম্পূণরূপে নিষিদ্ধ। প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে ভাদ্র মাসের শেষদিনে অনুষ্ঠিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মনসা পূজা। এই পূজাকে কেন্দ্র করে ৩শ বছরের বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই ‘গুড় পুকুরের মেলা’। তবে কে বা কারা মেলাটির গোড়াপত্তন করেছিলেন তার কোনো ঐতিহাসিক দলিল পাওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, মেলাটি আবহমান কাল ধরে চলে এলেও ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর মেলা চলাকালে শহরের একটি সিনেমা হল আর সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে সার্কাসের প্যান্ডেলে বোমা হামলা করে জঙ্গীরা। এই ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক নারী-পুরুষ আর শিশু। এর ফলে ৬ বছর ধরে মেলা পরিচালনার অনুমতি না পাওয়ায় মেলা বন্ধ ছিলো। অবশেষে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে আবার শুরু হয় এই মেলা। মেলা সাধারণত এক মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও সেবছর মেলা ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়।