মাছের রাজা ইলিশের ভরা মৌসুম এখন। সাগর ও নদীতে ব্যাপক হারে মেলার কথা বাংলাদেশের জাতীয় এ মাছের। বাজারও সয়লাব হয়ে দাম থাকার কথা হাতের নাগালে। কিন্তু চলতি বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া গেলেও চড়া দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। তাই সাধ থাকলেও সাধ্যের কারণে মাছটির স্বাদ নিতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। শুক্রবার ১লা সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালী বাজারের মাছের আড়ত ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। ছোট আকারের ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৭০০ টাকা; ৪০০ গ্রাম ওজনের ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ১০০০ টাকা; ৬০০ গ্রাম ওজনের ১২০০ টাকা। ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ১৪০০ টাকা; ৮০০ গ্রাম ওজনের ১৭০০ টাকা। ৯০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি ১৮০০ টাকা, এক কেজি ওজনের দাম ১৭৫০ থেকে ১৯০০ টাকা। গত ২৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরে জেলেদের ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় এখন বাজারে ব্যাপক হারে ইলিশ মাছ পাওয়া যাওয়ার কথা। উল্টো সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সে অনুপাতে মিলছে না ইলিশ। ফলে দাম আকাশছোঁয়া বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। কামারখালী আড়ত থেকে ইলিশ কিনে এনে কামারখালী হাটে ও বাজারে বিক্রি করেন ইউসুফ । এ মাছের বাড়তি দামের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্ষাকালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এবার নদীতে মাছ নেই। সাগরের মাছও আসছে না। যে কারণে বাজারেও পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এই মাছ তো আর চাষ করা যায় না, প্রাকৃতিকভাবে আসে। সাগরের মাছ এলে তখন দাম কমবে। একই কথা বলেন বরকত বিশ্বাস নামের অপর বিক্রেতা। তিনি বলেন, এবার নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে না। ১৫ দিন আগেও বাজারে ইলিশের দাম কম ছিল। কিন্তু এখন সরবরাহ নেই। তার উপর ইলিশ ধরার খরচ, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ইলিশের দাম একটু বেশি। তারুল ইসলাম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, অনেকে দাদনের মাধ্যমে ইলিশ আনে আবার নগদ বেশী দামে কিনে কামারখালী আড়তে এনে বেশী দামে কিনে আমাদের বেশী দামে বিক্রি করতে হয়। তাছাড়া এবার সাগর-নদীতে মাছ নেই। জেলেরা ৪-৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরতে যায়। খরচ পড়ে ৮০ হাজার টাকা। অথচ মাছ পায় ৫০-৬০ হাজার টাকার। তাহলে কম টাকায় তারা বিক্রি করবে কীভাবে? আর তারা মাছের দাম কম না রাখলে আমরাই বা ক্রেতাদের কাছে কম টাকায় কীভাবে মাছ বিক্রি করবো? দাম কম হলে আমাদেরই সুবিধা। বেশি বিক্রি হয়, বেশি লাভ হয়। এখন আর বর্ষাকালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে না দাবি করে তিনি আরও বলেন, পরিবেশ-প্রকৃতি ঘুরে গেছে। এখন বর্ষাকালের জায়গায় শীতকালে ইলিশ মাছ বেশি ধরা পড়ে। শিমুল নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এখন ইলিশ দাম হওয়ার কথা সবচেয়ে কম। কিন্তু এখনই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই মাছ। ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি মাছ কিনতে হয়েছে ১০০০ টাকায়। ১৬০০ টাকা করে কেজি। কিন্তু এই মাছটির দাম হওয়া উচিত ছিল ৪০০ টাকা। দামের কারণে বিত্তবানরাই ঠিকমতো ইলিশ খেতে পারছে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের তো খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সালমা বেগম নামের এক গৃহিণী বলেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এবার ইলিশের দাম দ্বিগুণ। সাধ থাকলেও ইলিশ কেনার সাধ্য হচ্ছে না। অথচ প্রায় সময়ই খবরে দেখি আমরা ইলিশ আহরণে প্রথম অবস্থানে আছি। ইলিশের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা যেসব কারণ বলছেন, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন কামারখালী বাজার মৎস্য আড়তদার আঃ কুদ্দুস বিশ্বাস । আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের কামারখালী আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে যে পরিমাণ ইলিশের চাহিদা, সেই তুলনায় সরবরাহ একেবারেই কম। এই জন্য ইলিশের দাম এখন একটু বেশি। দুই একদিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে তখন দাম কিছুটা কমবে। তবে মোকামেই ইলিশের দাম চড়া। তিনি আরও বলেন, ইলিশের মূল মৌসুম এখনই। কিন্তু এখন সাগরের আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। নদীতেও কম পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ইলিশ না পাওয়া যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন। ফলে যে সময়ে ইলিশ পাওয়া যাওয়ার কথা, সেই সময়টি পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সময় আবার ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যে কারণে বাজারে ইলিশের প্রাপ্যতা কম। গত ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠেছে। আমাদের দেশের জেলেরা এর আগে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি। তাই ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়াতে দখল ও দূষণের হাত থেকে উপকূলকে বাঁচানো, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ইলিশ ধরা, খাওয়া ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ এবং ভারত ও বাংলাদেশের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় একই করার পরামর্শ দেন তিনি। তবে সব কিছুর মূলে সবার ধারনা কামারখালী ইলিশের আড়তদারদের ইলিশের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য মাছের দাম বাড়ার ক্ষেত্রেও সবার সিন্ডিকেট আছে। তাই ক্রেতারা বাজারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।