রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় রয়েছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল ভর্তি বাণিজ্য। এছাড়া মার্কেট ও কাঁচাবাজার রয়েছে। সেখানে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন করা হয় বৃহত্তর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। টিপু হত্যার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ এমনটি জানিয়েছে। পুলিশ বলছে, টিপু হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নে সরাসরি শুটার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ (৩৪)। তাকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। আরেকজন শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫)। তাকে গ্রেফতার করা হয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে। আর টিপু হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩)। হত্যার পর তাকে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান থেকে গ্রেফতার করে ফিরিয়ে আনে ডিবি। গতকাল সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের তদন্তে টিপু হত্যায় মোট আসামির সংখ্যা ৩৪ জন। তবে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় তার নাম বাদ দিয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে নামও সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করা হবে অভিযোগপত্রে। ডিবিপ্রধান বলেন, মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ অনুসারে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন। তারা হলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ, নাসির উদ্দিন মানিক ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা। টিপু হত্যার মামলার তদন্ত সম্পর্কে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জাহিদুল ইসলাম টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। অনেক ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। ১৪ মাস আগে টিপু খুন হন। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্ত কাজ শুরু করে। প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেফতার করি। টিপু একা খুন হননি। তাকে হত্যা করতে আসা শুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি (২২)। এই খুনের তদন্তে আমরা প্রায় ২৪ জনকে গ্রেফতার করেছি। আজকে আমরা ৩৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করি। পলাতক রয়েছেন ৯ আসামি। ডিবিপ্রধান বলেন, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ভারতে পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বেইলী রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা ও হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। এজন্য কোনো ধরনের ভুল বা ক্রুটি না হয়, সেজন্য তদন্তে সময় নেওয়া হয়। আজ তার অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো। ‘আমরা মনে করি, যারা জড়িত, অপরাধী, সাক্ষ্যপ্রমাণ পারিপার্শ্বিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে শুধু তাদের নামই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না তাদের কারো নাম যুক্ত করা হয়নি। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করিনি আমরা।’
টিপু হত্যায় গ্রেফতার যারা: জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (৮৮) আবু সালেহ শিকদার ওরফে সুটার সালে (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), সোহেল শাহরিয়ার (৪১), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯), ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২), রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব (৩১), ও মোরশেদুল আলম পলাশ।
হত্যাকাণ্ডের পর পলাতক যারা: এনামুল ইসলাম ওরফে এক্সেল সোহেল (৪৮), রিফাত হোসেন (৩৮), রানা মোল্লা (৪০), আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব (৩৫), সামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল উজ্জল (৪১), কামরুজ্জামান ও বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার (৬২), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮) ও মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭)।