উপকুলীয় জনপদ খুলনার কয়রায় চিংড়িচাষিরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যাচ্ছেন। একদিকে অনাবৃষ্টি অন্যদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে চিংড়িচাষিদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। কয়রার অধিকাংশ মৎস্য ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না চিংড়িচাষিরা। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বলা চলে একটি নিবিড় চিংড়ি চাষ অঞ্চল। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চিংড়ি উৎপাদন কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, পোনার মূল্য বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে প্রায় প্রতিটি ঘেরে বাগদা চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। মৎস্য ঘেরে এক ধরনের কাটা শ্যাওলার জন্ম হয়ে থাকে, যেটা বাগদা চিংড়ির খাদ্য ও পুষ্টি জোগায়। কিন্তু এ বছর প্রচণ্ড খরায় তা আর কাজে আসছে না। খাদ্যসংকট, অনাবৃষ্টি, অধিক তাপ, প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি, সব মিলিয়ে চিংড়িচাষিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া সরকার নদী বা সাগর থেকে রেনু পোনা আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় চিংড়িচাষিরা মহাসংকটে পড়ছে। নদীর পোনা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়, কিন্তু হ্যাচারির পোনা সেটি পারে না। ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের মৎস্য ঘের চাষি আবু মুছা সরদার বলেন, প্রাকৃতিক পোনা বাগদা চাষিদের জন্য একটি আশীর্বাদ। এই পোনা জীবাণুমুক্ত এবং মৃত্যুর হার কম। পাশাপাশি দ্রুত বর্ধনশীল। সরকার নদী বা সাগর থেকে রেনু পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করায় এই সুযোগটাকে কাজে লাগায় হ্যাচারি কোম্পানিগুলো। কিন্তু হ্যাচারি পোনায় মড়ক লাগে বেশি। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের পাথরখালী গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, চিংড়ি চাষে কোনো কোনো সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতি বছর চাষিরা কিছুটা হলেও সাদা মাছের পোনা ছেড়ে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা পুষিয়ে নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানির লবণাক্ততা এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এবার সাদা মাছের পোনা ছাড়তে সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অতিরিক্ত লবণযুক্ত পানির জন্য সাদা মাছ মারা যায়। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সম্ভাবনাময় এ চিংড়ি খাতে। খড়িয়া মঠবাড়ি গ্রামের ভবসিন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছি, কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় চিংড়ি ঘেরে পানি কম থাকা, তাপমাত্রা বেশি ও লবণাক্ততার জন্য রেণু ছাড়তেই মারা যাচ্ছে। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় চিংড়ির বাজার মূল্য কম। এ অবস্থায় কীভাবে ব্যাংক লোন শোধ করব, সেটা ভেবে অস্থির হয়ে আছি।’ কয়রার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আমিনুল হক বলেন, ইতিমধ্যে মৎস্য অফিসের উদ্যোগে চাষিদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া লিফলেট বিতরণ করাসহ বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য ঘেরে উপস্থিত হয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।