তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনী সবুজ প্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, সামুদ্রিক দূষণসহ পরিবেশগত নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করে যাবে বাংলাদেশ। সুইডেনের স্টকহোমে ইইউ ইন্দো-প্যাসিফিক মিনিস্টেরিয়াল ফোরামে স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘সবুজ উদ্যোগ ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ’ গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এস্তোনিয়া, মালদ্বীপ, ডেনমার্ক, ইউরোপিয়ান কমিশনসহ ইইউ ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কয়েকটি দেশ এতে অংশ নেয়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, বন্যা ও খরা, তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, মহাসাগরের অম্লায়ন ইত্যাদি, বিশেষত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ বৈশ্বিক অনুপাতে ০.৪৭ শতাংশের কম হলেও আমরা পরিবেশ পরিবর্তনের অসহায় শিকার। বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় একটি দেশ হিসেবে জলবায়ু ও দুর্যোগজনিত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ৭ম স্থানে রয়েছি আমরা। এ অবস্থা উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা গোলটেবিলে তুলে ধরেন পরিবেশবিদ তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ নিজস্ব জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নে ৮০০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। সরকার ২০২২-২০৪১ সালব্যাপী মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার মাধ্যমে নবায়নযোগ্য শক্তির সর্বাধিক ব্যবহারে কাজ করছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ ২৬-এ আমাদের শক্তির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আমরা ৬ মিলিয়নেরও বেশি সোলার-হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে ২০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় এনেছি, যা বিশ্বে এ ধরনের কাজের বৃহত্তম নজির। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্ভাবন ও স্থাপনায় বিশ্বব্যাপী অগ্রগামী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সবুজ অংশীদারিত্বে যোগদানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ অনুকূল সাড়া দিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর কারিগরি, আর্থিক সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে। হাছান মাহমুদ বলেন, পরিবেশ পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন এবং ঝুঁকি প্রশমনের মধ্যে ভারসাম্য ও লাভ-ক্ষতি তহবিলের প্রাথমিক কার্যক্রম চালু করার জন্য উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে ইইউ ও অন্যান্য ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশ একত্রে কাজ করতে আগ্রহী। গত রোববার দুপুরে সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠকে তারা দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় যেমন বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন, অন্যান্য উৎস থেকে সবুজ শক্তি উৎপাদন, উচ্চ প্রযুক্তি শিল্প, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকিহ্রাস এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেহেদী হাসান গোলটেবিল ও দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।