ক্রিকেট দুনিয়ায় সাকিব আল হাসানের এক নামেই পরিচিত। সানাথ জয়সুরিয়া ও শহীদ আফ্রিদি’র মত রেকর্ড বইয়ে লিখিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটে ৭০০০ রান করে নিজের দক্ষতা ও প্রতিভার অনন্য পরিচয় দিয়েছেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার ওপর, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে “বাংলাওয়াশ” তো রয়েছেই!
কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি নিরলস মনোযোগের ফল হিসেবেই শুরু হয়েছে সাকিবের সাফল্যের পথে অগ্রযাত্রা। ২৪ মার্চ, ১৯৮৭-এ জন্ম নেওয়া সাকিবের ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি
ঝোঁক ছিল। ২০০৩ সালে তার অনূর্ধ্ব ১৭ ক্রিকেটে অভিষেক হয় এবং ২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে তার প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ খেলা খেলেন। এছাড়া, খুলনা জাতীয় ক্রিকেট লীগে তিনি খেলেছেন ২০০৪ সাল থেকে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে একটি ওডিআই ম্যাচে আগস্ট ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন সাকিব, যেখানে এলটন চিগুম্বুরার উইকেটসহ ৩০ রান করেছিলেন এই তারকা খেলোয়াড়। ব্যাট ও বল উভয় ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা প্রদর্শন করে খুব দ্রুত তিনি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
একের পর এক মনোমুগ্ধকর পার্ফরমেন্স দিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন কেড়ে সাকিব হয়ে উঠেছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মাশরাফি মর্তুজার প্রথম মেয়াদে একাধিক ইনজুরির পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশে দলকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব আসে সাকিব আল হাসানের হাতে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর পাশাপাশি সাকিবের ধারাবাহিকতা ও চাপ সামলানোর অনন্য প্রতিভা বাংলাদেশকে ৪৭টির মধ্যে ২২টি খেলায় বিজয় এনে দেয়। এই বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার এখন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি২০’র অধিনায়ক।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭০০০ রান ও ৩০০ উইকেট নেওয়া সাকিবের এই সাম্প্রতিক কীর্তি একজন শীর্ষ শ্রেণীর অলরাউন্ডার হিসেবে তার দক্ষতার প্রমাণ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের ৯৩ রান এবং চার উইকেটের
অবদান দলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জয়ের দিকে নিয়ে যায় এবং সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হিসাবে সাকিবের অবস্থান আরও মজবুত করেছে।
এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ২৩১ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর অবস্থান ধরে রেখেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে একমাত্র বাংলাদেশি বোলার হিসেবে তিনি ১২৮ উইকেট
পেয়েছেন, যা এই সংস্করণে যেকোনো বাংলাদেশি বোলারের সবচেয়ে বেশি উইকেট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাকিবের ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স তাকে টি-টোয়েন্টিতে ৬০০০ রান, ৪০০ উইকেট এবং ৫০টি ক্যাচের
মাইলফলক অর্জন করা ক্রিকেটারদের অভিজাত গ্রুপে স্থান দিয়েছে।
ক্রিকেটে অতুলনীয় দক্ষতার পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি সাকিবের প্রতিশ্রুতিও সমানভাবে প্রশংসনীয়। ১৪ বছরে বিবিএ শেষ করে সম্প্রতি এআইইউবি থেকে স্নাতক গ্রহণ করলেন তিনি – যা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
আমাদের এই ক্রিকেট তারকা এর মধ্যে জড়িয়েছেন একাধিক বিতর্কেও, কিন্তু তার কোনটি এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার-কে টাইগারদের কে সাফল্যের দিকে এগিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দুর্দান্ত
পারফরমেন্স দিয়ে বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিভাবান এবং সফল ক্রিকেটারদের একজন। তার এই এগিয়ে যাওয়া সবার জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক। ক্রিকেটের প্রতি
তার নিবেদন, কঠোর পরিশ্রম, ধারাবাহিকতা এবং অধ্যবসায় প্রমাণ করে যে সঠিক মানসিকতা এবং দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে যেকোন কিছু অর্জন করা সম্ভব।
দৈনিক নবচেতনার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন