ভারত থেকে বোয়ে আসা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমান্ত দিয়ে প্রবল স্রতে ধেয়ে আসা এক সময়ের উত্তাল পূর্বভবা নাদি এখব পানি শুন্য । নাব্যতা হারিয়ে মরা খালের মত এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে।
ফলে এর এর তলদেশ খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া নদিতে পানি না থাকায় লক্ষাধীক হেক্টর জমির বোরো ধান আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানাগেছে, নদীটিতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করতো অসংখ্য পাল তোলা নৌকা, লঞ্চ, ষ্টির্মার। মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার
গোমস্তাপুর, রহনপুর, নাচোলসহ দেশের অন্যান্য উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে।
নদীটির প্রবহমান দুই তীরের বসতি এলাকায় বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় গড়ে উঠে বড়বড় হাট বাজারে। ব্যবসার জন্য বিভিন্ন পন্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের ছোট বড় নৌকায় পাল তুলে ছুটে চলতেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত।
শুধু পন্যই নয় হাটবাজার গুলিতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সে সময় পূনর্ভবা ছিল পূর্ন যৌবনা। এলাকার একমাত্র নদিপথ হিসাবে ব্যবহার করে অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন জীবিকার শক্ত ভীত গড়ে তুলেছিল।
শুধু হাটবাজারই নয়, নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। এর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবুজের সমাহারে সোনালী ফসল ধান ফলাতো।ফলে নানা ফসলে ভরে উঠতো কৃষকের ক্ষেত।
এছাড়া নদীটি ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই পূনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর ধরে। ফলে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রাম গুলিতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল।
জীবিকার নির্বাহের জন্য জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতেন মাছ ধরার জন্য। মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলতো। সময় গড়িয়ে চলার সথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পূনর্ভবা এখন খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। খরার সময় বালু ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়না এর তলদেশে।
একারনেই আশেপাশের জেলে পরিবার গুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। নদির পাহাড় গুলি পরিনত হয়েছে কৃষি জমি। নদী গর্ভে জেগে উঠা চরে। এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, ফুটবল সহ বিভিন্ন খেলা। এক সময়ের ব্যবসা বণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী, নিভে গেছে বিপুল সম্ভবনা। নদী কেন্দ্রীক সম্ভবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি।
সরকারিভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত সারাবছরই এতে পানি থাকতো। এতে কৃষকদের জমির ধানের উৎপাদন বেড়ে যেত। নদিটিও পরিনত হতো না বালুচরে। তাছাড়া নদীটি কখনও খনন বা রক্ষণাবেক্ষনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে নদীটির পাহাড় ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে।
এ সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছেন। খনন না করলে এক সময়ের উত্তাল পূনর্ভবা হয়তো বা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। ততসঙ্গে পানির অভাবে জমিতে ফসল হবেনা বলে বিশিষ্টজনরা মনে করছেন।
দৈনিক নবচেতনার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন