তুচ্ছ ঘটনায় তর্কাতর্কির জের ধরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিনোদপুরে রাবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় স্থানীয়রা বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং শাহ মখদুম হল প্রাধ্যক্ষের বাসভবন ভাঙচুর করেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর বাজারের দোকানপাট-বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেন। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের ২ শতাধিক ব্যক্তি কমবেশি আহত হয়েছেন। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরা জানান, বাসে বসাকে কেন্দ্র করে চালকের সহকারীদের সঙ্গে প্রথমে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। পরে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এক পর্যায়ে বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তারা হলেন- রায়হান ইসলাম ও জাবের আহমেদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক জানান, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের সময় বিনোদপুর বাজারে কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। তবে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’
বিনোদপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ দাবি করেন, সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী বাসের হেলপার ও ড্রাইভারকে মারতে শুরু করেন। পরে তারা দৌড়ে পাশেই ইমরানের জুতার দোকানে গিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। তখন ইমরান তাদের রক্ষার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। তখন অন্য দোকানিরা এগিয়ে এলে সবাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে ৩০টি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের হামলায় কয়েকজন দোকানদার আহত হয়েছেন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। আগুন লাগিয়ে দোকান পুড়িয়ে দিলেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহতদের বাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সহ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম জানান, ‘আমাদের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে কাভার করা যাচ্ছে না। আমরা তাদের বাস দিয়ে রামেকে (রাজশাহী মেডিকেল কলেজ) পাঠাচ্ছি।’
এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম উল হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মীর কাদির, অপি করিম, দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ। প্রাথমিকভাবে বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
সন্ধ্যা রাতের খবর অনুযায়ী, শিক্ষার্থী ও দোকানদাররা মুখোমুখি অবস্থান করছিলেন। স্থানীয় দোকানদাররা অবস্থান করছিলেন বিনোদপুর বাজারে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের ভিতরে ক্যাম্পাসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের বিনোদপুর হয়ে কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হয়নি। বিনোদপুর বাজারে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। রাত ৮টার পরে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি সব পক্ষকেই শান্ত থাকার নির্দেশ দেন। এর পরও সংঘর্ষ চলতে থাকে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বিনোদপুর বাজারে যান। তখন তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এতে ঘটনা আরও বড় হয়ে যায়। শুরু হয় এক পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ অবস্থায় বিনোদপুর বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলো থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর ফটকে এসে অবস্থান করেন। বিনোদপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ থাকে।
এ অবস্থা প্রায় ৩ ঘণ্টা চলার পর পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার অভিযানে নামেন। তারা টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে রাস্তা থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে দেন। অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় তৎপর হন।
এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আজ ও আগামীকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হয়ে এ ঘোষণা দেন।