সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৩২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল ইংলিশরা। সিরিজ হারের সঙ্গে এবার হোয়াইটওয়াশের শঙ্কায় পড়ে গেল টাইগাররা।
শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের দেয়া ৩২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৪.৪ ওভারে ১৯৪ রানে অলআউট হয় স্বাগতিকরা। এতে ১৩২ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিজেদের করে নেয় ইংল্যান্ড।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২.১ ওভারে দলীয় মাত্র ৯ রানে ফেরেন লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে দলের হাল ধরেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই দুই তারকা ব্যাটসম্যান সাকিব-তামিম। চতুর্থ উইকেটে তারা ১১১ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন। তাদের এই জুটিতে প্রাথমিক বিপর্যয় এড়িয়ে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ।
উইকেটে সেট হয়ে দলকে চাপমুক্ত করে দুজনেরই সুযোগ ছিল নিজের ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করার। কিন্তু সেঞ্চুরিতো দূরে থাক! ফিফটিও হাঁকাতে পারেননি দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি ৬৫ বল খেলে মাত্র ৩৫ রান করে ফেরেন সাজঘরে।
তামিম আউট হওয়ার পর ফিফটি তুলে নেয়া সাকিবকে নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমিরা আশা করেছিলেন তিনি তার ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড়োবালি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৪৪ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়ে ফেরেন সাকিব। দলীয় ১২২ রানে ২৮তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২৬তম ম্যাচে সাকিব ৫১তম ফিফটি হাঁকান। এদিন ৬৯ বলে ৫টি বাউন্ডারির সাহায্যে সাকিব করেন ৫৮ রান।
সাকিব-তামিম আউট হওয়ার পর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজরা। মাহমুদউল্লাহ-আফিফ ৩২ ও ২৩ রান করে করলেও ৭ রানে ফেরেন মিরাজ।
শেষ দিকে পেসার তাসকিন আহমেদ ২১ বলে ২১ রান করায় দুইশোর কাছাকাছি পৌঁছায় বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৫ রানে উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তাসকিন আহমেদের বলে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ফিল সল্ট। সাজঘরে ফেরার আগে ১৫ বলে ৭ রান করার সুযোগ পান এই তারকা ওপেনার।
এরপর ডেভিড মালানকে সঙ্গে নিয়ে ৫৪ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন ওপেনার জেসন রয়। ১৫.৩ ওভারে দলীয় ৮৩ রানে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে আউট হন প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করা ডেভিড মালান। তাকে ১১ রানের বেশি করতে দেননি মিরাজ।
দলীয় ৯৬ রানে তাইজুল ইসলামের বলে আউট হন জেমস ভিন্স। ফিল সল্ট, ডেভিড মালান ও জেমস ভিন্সরা আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নিলেও উইকেট কামড়ে ব্যাটিং করে যান ওপেনার জেসন রয়। তাকে সাজঘরে ফেরান সাকিব আল হাসান।
সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লু হন জেসন রয়। সাজঘরে ফেরার আগে ১২৪ বলে ১৮টি চার আর একটি ছক্কার সাহায্যে ১৩২ রান করেন ইংলিশ এই তারকা ওপেনার।
এরপর উইল জ্যাকসকেও ফিরতে হয় দ্রুতই। তাকে ফেরান পেসার তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের বল লেগে টেনে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন সাকিবের হাতে। ৪ বল খেলে কেবল ১ রান করেন তিনি। রয়ের ফেরার পর বাংলাদেশের জন্য বড় দুশ্চিন্তা হয়েছিলেন জস বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেও।
মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের বলে নিজেই দারুণ এক ক্যাচ নিলে বাটলারকে ফিরতে হয় সাজঘরে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় এর আগে ৬৪ বলে ৭৬ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর দলকে টেনে নেন মঈন আলী ও স্যাম কারান। তাদের কল্যাণেই তিনশ ছাড়িয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৪২ রান করে মঈন ফিরলেও শেষ অবধি অপরাজিত থাকেন স্যাম কারান। তিনি ২ চার ও ৩ ছক্কায় ১৯ বলে করেন ৩৩ রান। এতে ৭ উইকেটে ৩২৬ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড।
বাংলাদেশের বোলারদের প্রায় সবাই-ই ছিলেন খরুচে। ছয়ের নিচে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন কেবল তাইজুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৫৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি। ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। এছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৭৩ রান দিয়ে দুই ও সাকিব ৬৪ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি মুস্তাফিজুর রহমান।