পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার এ সভায় তিনি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, গাম্বিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, জিবুতি, সেনেগাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া জাতিসংঘে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসির স্থায়ী পর্যবেক্ষণ মিশনের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের পরিস্থিতিবিষয়ক একটি রেজুল্যুশন (২৬৬৯) গৃহীত হয়। এতে মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যাসহ রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়টিও বিশেষভাবে পাধান্য পায়। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিগত বছরগুলোতে নিয়মিতভাবে রোহিঙ্গাবিষয়ক রেজুল্যুশন পাস হয়। নিরাপত্তা পরিষদ এবং সাধারণ পরিষদের রোহিঙ্গাবিষয়ক এই রেজুল্যুশনগুলোকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জোরালো আহ্বান জানানোই ছিল এ সভার মূল উদ্দেশ্য।
এ সভায় বক্তৃতাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে সফলতা না আসায় হতাশা ব্যক্ত করেন। এর ফলে তিনি বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্ভাবনার কথা পুনরায় উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো ছোট আয়তনের দেশে বিপুল জনসংখ্যাসহ অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার ওপর মিয়ানমার থেকে আগত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করা কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি গৃহীত রেজুল্যুশনের প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে তিনি আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান’র নেতৃত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন।
শুক্রবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ সংবাদ জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, ওই সভায় বক্তারা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তারা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যের সফল বাস্তবায়নের ওপরও জোর গুরুত্ব দেন। সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা মিয়ানমার থেকে আগত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয়, সকল ধরনের মানবিক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
উল্লেখ্য, এ সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।