বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ভালো নেই।সুন্দরবন মায়ের মতো আগলে রাখলেও মানুষের ক্রমাগত অত্যাচারে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির মুখে বনের প্রকৃতি। সাগরের পানির উচ্চতা ও লবণাক্ততা বাড়ায় কমে যাচ্ছে গাছ ও বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা কেটে নিচ্ছে গাছ। শিকার করা হচ্ছে বাঘ ও হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনাঞ্চল রক্ষায় দক্ষিণ জনপদে জোরালো আওয়াজ উঠেছে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসছে সুন্দরবন দিবস। যার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিশ্ব ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে এবারও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের বিভিন্নস্থানে নানা সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হয়েছে ‘ সুন্দরবন দিবস’। ২১ বছর এ দিবস পালিত হলেও এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি। আজও অবহেলিত উপকূলীয় জনপদের প্রাণের দাবি ‘সুন্দরবন দিবস’। এদিন বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সুন্দরবন একাডেমী ও খুলনা প্রেসক্লাবের আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সুন্দরবন আমাদের একটি আবেগের জায়গা।সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে উপকূলীয় লাখো মানুষের জীবন ও তাদের বাড়িঘরকে রক্ষা করছে। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় সুন্দরবনের রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা। এর নদ-নদী, চারিদিকে ঘিরে থাকা বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ এখন শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের এক অনন্য সম্পদ। এক সময় সুন্দরবনে অনেক কিছু ছিল। তবে দিন দিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ মধু আহরণে গিয়ে বিষ দিয়ে বাঘ মারছে, গোলপাতা আহরণে যেয়ে গরান, সুন্দরী গাছ কাটছে। অত্যাচার-অনাচারে জর্জরিত হয়ে সুন্দরবন ক্রমাগত অস্তিত্ব সংকট-ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সুন্দরবন হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য। ফলে সুন্দরবনের সুরক্ষা এখন সময়ে দাবি। এ বনের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ দরকার। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষায় সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। যার জন্য সুন্দরবন বিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি তুলে ধরা হয়। বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বনবিভাগ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, , উন্নয়ন সংগঠন এবং পরিবেশবাদীদের সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ জরুরি। এ ছাড়া সুন্দরবন নিয়ে মৌলিক গবেষণা প্রয়োজন। সুন্দরবন সুরক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা আরও শক্তিশালী করতে হবে। সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার দপ্তর, খুলনা উপপরিচালক মোঃ ইউসুফ আলী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম জাহিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা প্রমূখ। এদিকে সাতক্ষীরায় সুন্দরবন একাডেমী এবং বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের ম্যানগ্রোভ সভা কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। মোংলা উপজেলায় সুন্দরবন একাডেমী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’ন যৌথ আয়োজনে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শিশুদের সুন্দরবনভিত্তিক চিত্রাংকন ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা ।শরণখোলায় সুন্দরবন একাডেমী এবং শরণখোলা প্রেস ক্লাবের যৌথ আয়োজনে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দাকোপে সুন্দরবন একাডেমীর আয়োজনে আলোচনা সভা চালনা পৌরসভা ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাফল্য পাওয়া সে সম্মেলনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন সেই সময়ের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। ২০০১ সালের সেই সুন্দরবন সম্মেলনের পরের বছর ২০২২ সাল থেকেই খুলনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।