খুলনার কয়রায় নিষিদ্ধ বোরিং ড্রেজার মেশিন দিয়ে আবাদি জমি থেকে অবৈধভাবে ভূ-গর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফসলি জমি ধসে মাটির ভূগর্ভে যাওয়াসহ আশপাশের পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে প্রাইমারি বিদ্যালয়সহ পার্শ্ববর্তী ৪টি সরকারি ভবন এবং জনসাধারণের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন ওই ব্যক্তির বালু উত্তোলনে ক্ষতি হতে রক্ষা পেতে কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভূমি অফিস এবং থানায় একাধিক অভিযোগ করেন। প্রশাসন ৩ বার অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করে দিলেও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্র-ছায়ায় নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে অবৈধ ড্রেজার মেশিন মালিক ইউসুফ সহ ওই গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য আল আমিন, আইয়ুব ঢালী গং তাদের নিজস্ব ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে- পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী ২ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অথচ এসব আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। বরং উপজেলা প্রশাসনের মৌখিকভাবে বালু উত্তোলনকে উপেক্ষা করে আল-আমিন গং বালু উত্তোলন ও বিক্রির রমরমা ব্যবসা করছে। আর এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বয়ং প্রশাসনও হিমশিম খাচ্ছে। স্থানীয় জমির মালিক আব্দুল্লা আল মামুন ও রফিকুল ইসলাম জানান, যে জমি থেকে বালু তোলা হচ্ছে সেই জমিসহ আশ পাশের সমস্ত জমি বালু তোলার কারণে জমির তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। এর আগেও ওই জমি থেকে তারা ৬০ হাজার ফুট বালু বিক্রি করছে। এতে যে কোনো সময় বৃহৎ পরিসরে এলাকায় ফসলি জমির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। নিজেদের ফসলি জমি রক্ষার্থে নিরুপায় হয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোনো ফল পাচ্ছিনা। এবিষয়ে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক আম্বিয়া খাতুন বলেন, সাবেক সেনা সদস্য আল-আমিন নিজের স্বার্থে আগেও ৬০ হাজার ফুট বালু বিক্রি করে। আবার সে ৩ বিঘা জমি ভরাট করতে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। আমাদের রাস্তা সহ বাড়ি ঘরে ধস শুরু হয়েছে। স্থানীয় এক নেতার মদদে আল-আমিন প্রশাসনকে উপেক্ষা করে এসব করছে। বালু উত্তোলনকারী ও বিক্রেতা জমির মালিক আল আমিন জানান, নিজস্ব জমি থেকে বালু উত্তোলন করতেছি। অন্েযর জমি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মমিনুর রহমান জানান, আমি জেলা প্রশাসক অফিসে মিটিং এ আছি। বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বন্ধ না হলে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।