সারাজীবনের অপূর্ণ স্বপ্ন এখন অনেকটা বাস্তব। পাঁকা ঘর না হলেও সামান্য ঝড়-বর্ষায় আর চিন্তায় পড়তে হবে না। এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। আমি খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করি। দৈনিক নবচেতনাসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঘর পেয়ে খুশিতে আত্নহারা আয়শা। ঘর পাওয়ার পরে অনুভূতি ব্যক্ত করতে যেয়ে এসব কথা জানান খুলনার কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের হতদরিদ্র আয়শা। আয়শা আরও বলেন, জীবনের অধিকাংশ সময় ভাঙা ঘরে বসবাস করেছি। একটু বাতাস হলেই চিন্তার শেষ থাকতো না। গেল বছর আমার পৈত্রিক সম্পত্তির কিছুটা সরকারি রাস্তার নিচে চলে যায়। তখন ইউএনও স্যার আমাকে একটি পাকা ঘর দিতে চেয়েছিল। সারাজীবন কষ্টে কাটানোর পরে ইউএনও স্যারের আশ্বাসে পাকা ঘরে থাকার স্বপ্ন দেখি। খুশিও হই। তবে আজো কিছু পাইনি। বুড়ো বয়সে ডু সামথিং ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঘর পেয়েছি। খুব খুশি হয়েছি। তোমাদের জন্য দোয়া করি। আয়শাসহ কয়রায় বসবাসরত হতদরিদ্র কয়েকজনকে নিয়ে নবচেতনাসহ কয়েকটি পত্রিকায় এই প্রতিবেদকের পাঠানো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে কয়রার বাগালী ইউনিয়নের ফতেকাটি গ্রামে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসরত সবুর শেখের ৯ সদস্যের ভূমিহীন প্রতিবন্ধী পরিবার ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়ায় জরাজীর্ণ কুঠিরে বসবাসরত সরকারি রাস্তায় ক্ষতিগ্রস্ত আয়শা’র কথা উঠে আসে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরে জনসাধারণের মাঝে ও খুলনা গেজেট ফেসবুক পেজের পোস্টের কমেন্টে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি রাস্তা তৈরিতে ক্ষতিগ্রস্ত আয়শাকে কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এমনকি জীর্ণ ঘরে বসবাস করলেও ঘর দেওয়ার কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসের পরেও ৯ সদস্যের প্রতিবন্ধী পরিবারের জন্যও করা হয়নি কোন মাথা গোঁজার ঠাই। একপর্যায়ে উড় ংড়সবঃযরহম ঋড়ঁহফধঃরড়হ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলামের নজরে আসলে তারা সহযোগীতায় এগিয়ে আসেন। এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে প্রতিবন্ধী পরিবারটির ঘর দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও জায়গা না থাকায় ব্যর্থ হন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের সাথে সংগঠনটির প্রতিনিধি যোগাযোগ করেও ঘরের জন্য সামান্য জায়গা মেলাতে পারিনি। এদিকে আয়শার সামান্য জায়গা ছিল। সেখানে এ্যালবেস্টার দিয়ে একটি ঘর তৈরি করে দেন সংগঠনটি। উড় ংড়সবঃযরহম ঋড়ঁহফধঃরড়হ এর সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনটির মাধ্যমে তাদের কষ্টের জীবন সম্পর্কে অবগত হই। ইচ্ছা থাকার পরেও জায়গা না থাকায় প্রতিবন্ধী পরিবারটির ঘর দিতে পারিনি। বৃদ্ধা জননী আয়শার একটি ঘরের ব্যবস্থা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। পরবর্তীতে প্রতিবন্ধী ওই পরিবারটির কোন জায়গার ব্যবস্থা হলে আমরা সেখানে একটি ঘর তৈরি করে দিব ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত আমরা ৮৯টি অসহায় পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। অসহায় মানুষের জন্য আত্নকর্মসংস্থান, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পসহ আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রসঙ্গত, ৭৪ বছর বয়সের আয়শা দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ কুঠিরে বসবাস করে আসছিলেন। একমাত্র সন্তান গর্ভে থাকাবস্থায় স্বামী মারা যায় দেশ স্বাধীনের পূর্বে। তারপর থেকে বাপের ভিটায় থাকতেন। একপর্যায়ে সামান্য পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়ে সেখানে একটি ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করেন। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ঘর হারিয়ে আর তৈরি করতে পারেননি। একটা ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস করতে থাকেন। গেল বছর সরকারি রাস্তা তৈরি করতে যেয়ে সেই ঘরও সরিয়ে নিতে হয়। রাস্তার নিচে চলে যায় হতদরিদ্র আয়শার কিছু জমিও। রাস্তা তৈরির সময় তাকে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস একটি ঘর দিতে আশ্বাস্ত করলেও জমির ক্ষতিপূরণ কিংবা ঘর কিছুই পাননি।
///