বারবার রঙ পাল্টানো ম্যাচের ভাগ্য গড়াল শেষ ওভারে। দারুণ এক জয়ের আশা জাগালেন চামিকা করুনারত্নে। তবে শেষ পর্যন্ত পারলেন না তিনি অল্পের জন্য। নতুন চেহারার দল নিয়ে নাটকীয় জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল ভারত।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কাকে ২ রানে হারায় ভারত। ১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শেষ বলে ১৬০ রানে অল আউট হয় দাসুন শানাকার দল।
শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ১৩ রান। বাঁহাতি স্পিনার আকসার প্যাটেল শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। বৈধ প্রথম দুই বলে আসে ১ রান। তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন করুনারত্নে।
৩ বলে চাই ৫। তুলনামূলক ‘সহজ’ এই সমীকরণ মেলাতে দেননি আকসার। চতুর্থ বলে আসেনি কোনো রান, বেশ বাইরের বল ওয়াইড মনে করে ছেড়ে দেন ব্যাটসম্যান, কিন্তু ওয়াইড দেননি আম্পায়ার। শেষ দুই বলে করুনারত্নে নিতে পারেন কেবল ১ রান করে। দুবারই দ্বিতীয় রানের চেষ্টায় রান আউট হন কাসুন রাজিথা ও দিলশান মাদুশাঙ্কা।
ভারত এর আগে দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি পায় মূলত দিপক হুডা ও আকসারের ব্যাটে। একশর আগে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে অবিচ্ছিন্ন ৬৮ রানের জুটি গড়েন স্রেফ ৩৫ বলে।
২৩ বলে ৪ ছক্কা ও একটি চারে ৪১ রান করে ম্যাচের সেরা হুডা। ২০ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় আকসার করেন ৩১। ত্রিশ ছাড়াতে পারেন আর কেবল ওপেনার ইশান কিষান, ৩৭।
পরে বল হাতে ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন অভিষিক্ত পেসার শিভাম মাভি।
রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামিসহ ভারতের নিয়মিতদের অনেকেই নেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে। মাভির সঙ্গে এই সংস্করণে অভিষেক হয় শুবমান গিলেরও।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কিষানের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। গত মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা সবশেষ ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান প্রথম ওভারে একটি ছক্কার সঙ্গে দুটি চার মারেন রাজিথাকে।
বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলেন গিল। তবে থমকে যান তিনি ৭ রান করেই, মাহিশ থিকশানার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে।
টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব ও সাঞ্জু স্যামসনও এরপর দুই অঙ্কে যেতে পারেননি।
হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে দলকে এগিয়ে নেন কিষান। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই ব্যাটসম্যানকে থামান লেগ স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। ২৯ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় গড়া কিষানের ৩৭ রানের ইনিংস।
খানিক পর দারুণ এক ডেলিভারিতে পান্ডিয়াকে (২৭ বলে ২৯) কট বিহাইন্ড করান মাদুশাঙ্কা। পঞ্চদশ ওভারে ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ৯৪। সেখান থেকে হুডা ও আকসারের ওই জুটি আর ভারতের লড়াইয়ের পুঁজি।
রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কা ধাক্কা খায় দ্বিতীয় ওভারেই। পাথুম নিসানকাকে বোল্ড করে দেন মাভি। এই পেসার পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে।
চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসাও তেমন কিছু করে দেখতে পারেননি। মাঝে কুসল মেন্ডিস থামেন ২৫ বলে ২৮ রান করে। একাদশ ওভারে ৬৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর ঝড় তোলেন শানাকা ও হাসারাঙ্গা। দুজন ৪০ রানের জুটি গড়েন ২৩ বলে। ১০ বলে ২ ছক্কা ও একটি চারে ২১ রান করে বিদায় নেন হাসারাঙ্গা।
শেষ ২২ বলে শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৩৪ রান। বড় আশা হয়ে টিকে ছিলেন শানাকা। এরপরই লঙ্কান অধিনায়ককে (২৭ বলে ৪৫) ফিরিয়ে দেন উমরান মালিক।
পরের ওভারে থিকশানাকে ফিরিয়ে চতুর্থ উইকেটের স্বাদ পান মাভি। প্রজ্ঞান ওঝা ও বারিন্দার স্রানের পর তৃতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ৪ উইকেট পেলেন তিনি।
শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২৯ রান। শেষের আগের ওভারে হার্শাল প্যাটেলকে একটি ছক্কা মারেন করুনারত্নে। এই ওভারে আসে ১৬। শেষ ওভারে করুনারত্নের আরেকটি ছক্কায় আশা জাগলেও হতাশাই সঙ্গী হলো শ্রীলঙ্কার।
আগামী মঙ্গলবার পুনেতে হবে দ্বিতীয় ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৬২/৫ (কিষান ৩৭, গিল ৭, সূর্যকুমার ৭, স্যামসন ৫, পান্ডিয়া ২৯, হুডা ৪১*, আকসার ৩১*; রাজিথা ৪-০-৪৭-০, মাদুশাঙ্কা ৪-০-৩৫-১, থিকশানা ৪-০-২৯-১, করুনারত্নে ৩-০-২২-১, ধনাঞ্জয়া ১-০-৬-১, হাসারাঙ্গা ৪-০-২২-১)
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬০ (নিসানকা ১, মেন্ডিস ২৮, ধনাঞ্জয়া ৮, আসালাঙ্কা ১২, রাজাপাকসা ১০, শানাকা ৪৫, হাসারাঙ্গা ২১, করুনারত্নে ২৩*, থিকশানা ১, রাজিথা ৫, মাদুশাঙ্কা ০; পান্ডিয়া ৩-০-১২-০, মাভি ৪-০-২২-৪, উমরান ৪-০-২৭-২, চেহেল ২-০-২৬-০, হার্শাল ৪-০-৪১-২, আকসার ৩-০-৩১-০)
ফল: ভারত ২ রানে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটির পর ১-০ তে এগিয়ে ভারত
ম্যান অব দা ম্যাচ: দিপক হুডা