ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর ফুটবলের আরও এক কিংবদন্তির মৃত্যু। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট পেলে। কার্যত এই দুই মহানায়ককে হারিয়ে ফুটবল যেন অভিভাবকহীন হয়ে গেলো।
মৃত্যুর চার দিন পরে আজ ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির শেষ কৃত্যের প্রক্রিয়া শুরু হলো। স্যান্টোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে তাকে ২৪ ঘণ্টা ধরে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
গতকাল সকাল থেকেই ভিলা বেলমিরোর আশেপাশে ভিড় জমতে শুরু করে। হাসপাতাল থেকে পেলের মরদেহ এনে রাখা হয় স্টেডিয়ামের মাঝখানে তৈরি করা একটি অস্থায়ী মঞ্চে। তাঁর কফিনের উপরের অংশ খুলে দেওয়া হয়। একটি সাদা চাদর জড়ানো রয়েছে পেলের শরীরের উপরে।
ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব সান্তোসের স্টেডিয়ামে রাখা হয়েছে পেলের কফিনবন্দী নিথর দেহ। এই কিংবদন্তির শেষ কৃত্যে উপস্থিত হয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। সেখানে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর সব দেশে পেলের নামে স্টেডিয়াম বানানোর অনুরোধ করা হবে।
পেলের কপালে হাত রেখে প্রার্থনা করে শ্রদ্ধা জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন তার ছেলে এডিনহো। তার পর পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আয়োকি একটি ক্রুশ পেলের দেহের উপরে রাখেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে সাধারণ মানুষের জন্যে স্টেডিয়ামের দরজা খুলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এখানেই রাখা হবে তাঁর কফিন। এরপর শুরু হবে শেষযাত্রা। সান্তোসের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরানো হবে তাঁর কফিন। পেলেকে নিয়ে যাওয়া হতে পারে তাঁর পৈতৃক ভিটাতেও। সেখানে থাকেন তাঁর শতবর্ষী মা ডোনা সেলেস্তে আরান্তেস।
এই কিংবদন্তিকে শেষ বিদায় জানাতে যেখানে মানুষের ঢল, সে জায়গায় নেই ব্রাজিলের পোস্টারবয় নেইমার জুনিয়র। এ পিএসজি তারকার না থাকা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর আলোচনা।
ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতি উপস্থিত হয়েছেন কিন্তু পেলের স্নেহভাজন নেইমার কেনো আসতে পারলেন না তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। সেখানে অবিরাম নিজের ক্লাব পিএসজির জন্য খেলে যাচ্ছেন।
তবে বিশ্বকাপের পর প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই লাল কার্ড দেখতে হয়েছে ব্রাজিলের পোস্টার বয় নেইমারকে। এই তারকার বদলে সান্তোসে তার বাবা উপস্থিত হয়েছে। পিএসজি তারকার বাবা নেইমার সিনিয়র ব্রাজিলিয়ান গণমাধ্যম ‘গ্লোবো’কে বলেছেন, ‘নেইমার আসবে না। তবে তার মন খুব খারাপ। সে আমাকে এখানে তার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকতে বলেছে। কাউকে হারানো কত কষ্টের সেটা আমরা বুঝি। আমরা শুধু একজন খেলোয়াড়কেই হারাইনি, একজন মানুষকেও হারিয়েছি।’
নেইমার না এসে সুদূর ফ্রান্সে তার ক্লাব পিএসজির জন্য ট্রেনিং শেষে ব্যস্ত। ক্লাবটির হয়ে অনুশীলনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তিনি। যেখানে সমর্থকরা বিরূপ মন্তব্য করছেন। ফুটবল কিংবদন্তিকে শেষবারের মতো দেখতে না গিয়ে উল্টো ক্লাবের ফুটবলে ব্যস্ত থাকায় তোপের মুখে পড়েছেন নেইমার।