সাগরিকায় প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের শুরুটা আলো ঝলমলে হয়েছে বাংলাদেশের। প্রথম সেশনেই ভারতের টপঅর্ডার তিন ব্যাটারকে ফিরিয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু মাঝের সেশনে ক্যাচ মিস, ঠিক সময়ে রিভিউ না নেওয়া এবং ভাগ্যের সহায়তা না মেলায় দিনটি পুরোপুরি বাংলাদেশের হয়নি! তবে শেষ বিকালে ৫ ওভারে তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের ঝলকে অন্তত প্রথম ইনিংসে ভারতকে সাড়ে তিনশ’ রানে বেঁধে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রথম দিনশেষে সফরকারী ভারত প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করেছে ৬ উইকেট ২৭৮ রান।
টস জিতে শীতের সকালটা দেখে শুনে করেছিল ভারত। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুভমান গিল ও লোকেশ রাহুলের সাবধানী শুরুতে প্রথম ১৩ ওভারে বাংলাদেশের বোলাররা সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। প্রথম ৭ ওভারে সাকিব তিন বোলারকে ব্যবহার করেও তাদের পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। অবশেষে প্রথম ঘণ্টার শেষ ওভারে গিয়ে সাফল্য পায় স্বাগতিক দল। ইয়াসির আলীর দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরে ফেরেন শুভমান গিল (২০)। তাইজুলের লেগ স্ট্যাম্পে থাকা ফুল লেন্থের বল প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তাতে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ৪১ রানে।
সঙ্গীকে হারিয়ে বেশি দূর যেতে পারেননি অধিনায়ক লোকেশ রাহুলও। মূলত ধারাবাহিকভাবে স্ট্যাম্প বরাবর বোলিংয়ের পুরস্কার পেয়েছেন খালেদ আহমেদ। স্ট্যাম্প বরাবর তার একটি বল ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত করেছে। তাতে ভারতের অধিনায়ক রাহুলকে ২২ রানে থামতে হয়েছে। সাফল্য অব্যাহত থাকে পরের ওভারেও। প্রথম বল থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করা তাইজুল তুলে নেন বিরাট কোহলির উইকেট। তাইজুলের বলটি পিছিয়ে গিয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছেন তারকা এই ব্যাটার। পূজারার সঙ্গে আলোচনা করে রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি। কোহলি ৫ বল খেলে ১ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন।
সাগরিকায় তারপর সুন্দর সকাল পেরিয়েই বাংলাদেশ লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছিল। ফিরে এসে দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় বলে উইকেট নেওয়ারও সুযোগ ছিল। কিন্তু এবাদতের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল ব্যাটের কানায় লেগে পেছনে গেলে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান ঝাঁপিয়ে পড়েও তা গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি। একই সময় ঋষভ পান্তের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কাও তারা সামলে ওঠে। ২৯.১ ওভারে পান্তের বাউন্ডারিতে শতরানও রান পূরণ করে তারা। পান্তর ব্যাটিং দেখে মনেই হচ্ছিল না এটা বুঝি টেস্ট ম্যাচ! ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ৪৬ বলে ৪৫ রানে থেমেছেন এই ব্যাটার। মিরাজের নিচু হওয়া বল ব্যাকফুটে গিয়ে পয়েন্টে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আলতোভাবে ব্যাটে লেগে বল আঘাত হানে স্ট্যাম্পেই।
১২ রানে নতুন জীবন পাওয়া পূজারা শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরির কাছেই চলে গিয়েছিলেন। ১১২ রানে চার উইকেট হারানোর পর শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে দিনের সেরা প্রতিরোধ গড়েন এই ব্যাটার। এই জুটি বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে আবার ভারতের রেকর্ড। পঞ্চম উইকেটে তাদের আগের সেরা জুটিটি ছিল মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও রবীন্দ্র জাদেজার। ২০১৯ সালে ইন্দোরে ১২৩ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। ১৪৯ রানের জুটি গড়ে এবার পূজারা ও শ্রেয়াস তাদেরও ছাড়িয়ে গেছেন।
দারুণ প্রতিরোধ গড়া পূজারা তারপর অনায়াসেই দিনটি শেষ করতে পারতেন। কিন্তু তাইজুলের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল টার্ন করবে ভেবে পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়েই বিপদে ডেকে আনেন তিনি। বলটি পিচ করে সোজা আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। তাতে ২০৩ বলে ১১ চারে ৯০ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। এরপর দিনের শেষ ওভারের শেষ বলে মিরাজের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউর শিকার হন অক্ষর প্যাটেল (১৪)। এই অফস্পিনারের বলটি অক্ষরের ব্যাটের ফাঁক গলে পায়ে আঘাত হানে। ভারতীয়রা রিভিউ নিলেও আম্পায়ারের আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।
অপর দিকে ৮২ রানে অপরাজিত থাকা শ্রেয়াস আইয়ারকে ভাগ্যবান বলতেই হবে। দুইবার জীবন পেয়ে সেঞ্চুরির কাছে আছেন তিনি। একবার ৬৭ রানের মাথায় মিরাজের বলে ডিপ মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিলেও সেটি ফেলে দিয়েছেন এবাদত। তারপর আর ১০ রান তুলে এবাদতের বলে ক্লিন বোল্ড হলেও অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান তিনি। কেননা, বল স্ট্যাম্পে আঘাত হানলেও বেলস পড়েনি তার। নিয়ম অনুযায়ী তাই নটআউট থেকেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই উইকেটটি তুলে নিতে পারলে দিনটি পুরোপুরি হতে পারতো বাংলাদেশের।
প্রথম দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত প্রথম ইনিংসে ৯০ ওভার শেষে: ২৭৮/৬ (পূজারা ৯০, শ্রেয়াস ৮২*, পান্ত ৪৬; তাইজুল ৩/৮৪, মিরাজ ২/৭১, খালেদ ১/২৬)।