সেমিফাইনালের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগে দেখে নেওয়া যাক আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়ার শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো।
মুখোমুখি পরিসংখ্যান: বিশ্বকাপে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। পূর্বের দুই ম্যাচই ছিল গ্রুপ পর্বে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
২০১৮ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় দেখায় ৩-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছিল লুকা মদ্রিচরা।
ক্রোয়েশিয়ার শক্তি
প্রতিকূল পরিস্থিতে লড়াই করার সক্ষমতা রয়েছে এই ক্রোয়েশিয়া দলের। লুকা মদ্রিচ, মাতেও কোভাচিচ ও মার্সেলো ব্রজোভিচের মিডফিল্ড ত্রয়ী বল ধরে রাখতে পটু। রক্ষণেও ক্রোয়েশিয়া বেশ গুছানো ও সংঘবদ্ধ।
টাইব্রেকারেও মনোবল শক্ত রেখে লড়তে পারে ক্রোয়াটরা।
ক্রোয়েশিয়ার দুর্বলতা
শক্তিমত্তায় আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপ পর্বে কানাডাকে চার গোল দেওয়া ব্যতীত বাকি চার ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া গোল পেয়েছে মাত্র দুটি। দ্বিতীয় গোলটি এসেছে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের ১১৭ মিনিটে, এক ডিফ্লেক্টেড শটে।
১২০ মিনিটে গোলমুখে ওই একটি শটই নিতে পেরেছিল ক্রোয়েশিয়া।
এছাড়া টানা দুই ম্যাচে ১২০ মিনিট করে খেলা ক্রোয়েট খেলোয়াড়দের এই ম্যাচে ক্লান্তি এসে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। গত আসরে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত খেলে খেলে ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়ার জ্বালানি ফ্রান্সের বিপক্ষে ঠিকই শেষ হয়ে এসেছিল। ফাইনালে ৬৫ মিনিটে চার গোল খেয়েছিল মদ্রিচরা। আর্জেন্টিনার বিপক্ষেও এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে আর্জেন্টিনার বেঞ্চে থাকা তারকারা বদলি নেমে ম্যাচে প্রভাব ফেলতে শুরু করলে গোলমুখ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠবে ক্রোয়েশিয়ার জন্য।
আর্জেন্টিনার শক্তি
লিওনেল মেসি ডিফেন্স ছিঁড়ে বিদ্যুৎগতির দৌড় দিতে বা পাঁচ-ছয়জনকে কাটিয়ে গোল করতে হয়তো আর পারবেন না এখন। কিন্তু এখনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার।
তার গোলের উপর ভর করেই মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় নিয়ে ফিরেছে আর্জেন্টিনা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মলিনাকে দেওয়া তার পাস এই বিশ্বকাপের শীর্ষ মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও এরকম জাদুকরী কিছু নিয়ে উপস্থিত হতে হবে মেসিকে।
আর্জেন্টিনার দুর্বলতা
মেসিকে তুলে নিলে এই আর্জেন্টিনা দলকে মোটেও ভয়ঙ্কর মনে হবে না। মেসিকে কম্পলিমেন্ট করার মতো বিশ্বমানের আক্রমণভাগ বা ফুলব্যাক সিস্টেম নেই আর্জেন্টিনার। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে দানি আলভেজ, জর্ডি আলবা, আশরাফ হাকিমির মতো ফুলব্যাকদের সঙ্গে কম্বিনেশন তৈরি করা মেসিকে সঙ্গে দেওয়ার মতো কোনো ফুলব্যাক নেই আর্জেন্টিনায়। সামনে জুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্ন্দান্দেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টাররা সবাই ভালো খেলোয়াড় হলেও ঠিক বিশ্বমানের না। এবার সার্জিও আগুয়েরো বা গ্যাব্রিয়াল বাতিস্তুতার মতো কোনো কিংবদন্তি স্ট্রাইকারকে সঙ্গে পেলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে আসতো মেসির জন্য।
আর্জেন্টিনা দলে গতি ও সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে। তবে টুর্নামেন্টে এজন্য এখনো ভুগতে হয়নি তাদের। ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে অবশ্য বাড়তি কিছু করতেই হবে মেসিদের। এছাড়া, স্কালোনির দলের লক্ষ্য হবে মিডফিল্ডে মদ্রিচকে রাজত্ব করতে না দেওয়া। মদ্রিচকে থামানোর পাশাপাশি মেসিকে ছাড়াই কীভাবে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ভেদ করা যায়, সেই উপায় খুঁজতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
নবচেতনা / এমএআর