ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রেকর্ড ছিল শতভাগ সাফল্যে মোড়া। হার ছিল না একটিও। কিন্তু ম্যাচের আগে ইতিহাস গড়ার হুংকার দিয়েছিল ক্রোয়াটরা। মাঠের খেলাতে সেটা করেও দেখাল মডরিচরা। ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমিতে ওঠে গেছে ক্রোয়েশিয়া। হেক্সা মিশন নিয়ে কাতারে আসা নেইমারদের যাত্রা শেষ হলো কোয়ার্টার থেকেই। তিতে শিবিরকে নিতে হলো অশ্রুসিক্ত বিদায়।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট ছিল গোলশূন্য ড্র। অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটে নেইমারের গোলে লিড নেয় ব্রাজিল। জয়ের খুব কাছাকাছি যেন সেলেসাওরা। কিন্তু ১১৬ মিনিটে ব্রাজিলকে হতাশ করে ক্রোয়েশিয়ার এক গোল। ব্রুনো পেটকোভিচের গোলে ম্যাচে ১-১ সমতা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকে। যেখানে শেষ হাসি ক্রোয়েশিয়ার।
টাইব্রেকার ভাগ্য খারাপ ব্রাজিলের। রদ্রিগোর নেওয়া প্রথম শটই রুখে দেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। ক্রোয়েশিয়া নিজেদের প্রথম তিন শটেই গোল করে (ভ্লাসিক, মাজের ও মডরিচ)। ব্রাজিলের হয়ে পরের দুই শটে গোল করেন ক্যাসেমিরো ও পেদ্রো। চতুর্থ শটে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে গোল করেন মিস্লাভ ওরসিচ। ব্রাজিলের চতুর্থ শট নিতে আসে মারকুইনহস। তার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসতেই ক্রোয়েশিয়ার গগনবিদারী উল্লাস। ব্রাজিল শিবিরে বিদায়ের কান্না।
ম্যাচের শুরুতে ব্রাজিলকে চেপে ধরার চেষ্টা করেছিল ক্রোয়েশিয়া। গুছিয়ে উঠতে সময় নেয় সেলেসাওরা। ১৩ মিনিটে প্রতি আক্রমণে গোলের চেষ্টা করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ডান দিক থেকে ক্রস করেছিলেন অধিনায়ক মডরিচ। কিন্তু সেই ক্রসে পা ঠেকাতে পারেননি পেরেসিচ।
২২ মিনিটে পর পর দুটি আক্রমণ করেছিল ব্রাজিল। প্রথমে ভিনিসিউস তার পর নেইমার। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণে তা আটকে যায়। নেইমারকে আটকানোর মরিয়া চেষ্টা করেছে ক্রোয়েশিয়া। কয়েকবার ফাউলেরও শিকার হন তিনি। বাঁ দিকে ভিনিসিউসও গোলের মুখ খুলতে পারেননি। ৪২ মিনিটে বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। কিন্তু দর্শকদের হতাশ করেন নেইমাররা।
প্রথমার্ধে ক্রোয়েশিয়া তিনটি শট নিলেও একটিও থাকেনি লক্ষ্যে। অন্যদিকে ৫টির মধ্যে তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল ব্রাজিল। এই অর্ধে দুই দলই পায় একটি করে কর্নার।
দ্বিতীয়ার্ধের ৪৭ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু জমাট রক্ষণভাগের কারণে তা হয়নি। ক্রোয়েশিয়ার এক ফুটবলারের হাতে বল লাগলেও রেফারি ভার’র সঙ্গে পরামর্শ করে পেনাল্টি না দেওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন।
৫৭ মিনিটে রাফিনহাকে তুলে অ্যান্টনিকে নামান তিতে। ডান দিক থেকে আক্রমণ বাড়াতে চেয়েছিলেন তিনি। মাঠে নেমেই ডান দিকে পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। অল্পের জন্য গোল হয়নি। ৬৬ মিনিটে পাকুয়েতার শট প্রতিহত করেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। গোলকিপারের মাথায় ওপর দিয়ে শট মারতে গিয়েছিলেন। লিভাকোভিচের হাতে লেগে বল কর্নার।
৭৬ মিনিটে নেইমারের শট। এবারও ক্রোয়েশিয়ার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান লিভাকোভিচ। ৮০ মিনিটে অ্যান্টনির ক্রস পেয়েছিলেন রদ্রিগো। তাঁর থেকে পাসে পাকুয়েতার শট আবার আটকে দেন লিভাকোভিচ।
নির্ধারিত সময়ের বাকি সময়টাতে ব্রাজিল আক্রমণ করে গেছে বারবার। কিন্তু পোস্টে কার্যকরী জোড়ালো শট নিতে পারেনি তারা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় ক্রোয়েশিয়া বল পজিশনে এগিয়ে থাকলেও লক্ষ্যে একটি শটও নিতে পারেনি। ৬টি শটই ছিল পোস্টের বাইরে। অন্যদিকে ব্রাজিলের ১৫টি শটের ৮টি ছিল লক্ষ্যে। আদায় করে ৫টি কর্ণার।
অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল ব্রাজিল। করে গেছে মুহর্মুহ আক্রমণ। ১০৩ মিনিটে দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে বল মারেন ব্রোজোভিচ। সহজ সুযোগ নষ্ট ক্রোয়েশিয়ার।
১০৬ মিনিটে অবশেষে ব্রাজিলকে লিড এনে দেন তারকা ফুটবলার নেইমার। পাকুয়েতার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে বক্সে ঢুকে পড়েন নেইমার। ক্রোয়েশিয়া গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়লেও তাকে পাশ কাটিয়ে নেইমারের বুলেট গতির শট কাপায় ক্রোয়েশিয়ার জাল (১-০)। এই গোলে ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলেকে স্পর্শ করেন নেইমার। দুজনের গোলই এখন ৭৭।
শেষের চমকটা দেখায় ক্রোয়েশিয়া। পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণে ম্যাচে সমতা আনে দলটি। ১১৬ মিনিটে ওরসিচের দারুণ ক্রসে ব্রাজিলের জাল কাপান ব্রুনো পেটকোভিচ। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকে গড়ানো ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার জয়। সেলেসাওদের বিদায়।
নবচেতনা /এমএআর