খুলনা মহানগরীর ওপর যানবাহনের চাপ কমানো এবং নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলাকে খুলনা মহানগরীর সঙ্গে সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করাসহ ঐ তিন উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিবেচনা করে ছয় লেনের খুলনা সিটি আউটার বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন এই সড়ক নির্মাণ করা হলে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী যানবাহনসহ দূরপাল্লার পরিবহন খুলনা মহানগরীর মধ্যে প্রবেশ না করে মোংলা ও যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাজধানীর সঙ্গে সহজভাবে যাতায়াত করতে পারবে। বর্তমানে কেডিএর এই প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খুলনা মহানগরীর একেবারে গা ঘেঁষা রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলা। এই তিনটি উপজেলা নদীর কারণে খুলনা মহানগরী থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রতিদিন এই তিনটি উপজেলা থেকে জরুরি প্রয়োজন, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কাজের সন্ধানে হাজারো মানুষকে খুলনা মহানগরীতে আসা-যাওয়া করতে হয়। একাধিক নদীবেষ্টিত থাকার কারণে এই সকল মানুষকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হয়। অপরদিকে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ তিনটি উপজেলায় গড়ে ওঠেনি শ্রমঘন কোনো শিল্প-কলকারখানা। ফলে শিল্প ও বাণিজ্য নগরী খুলনার অতি সন্নিকটবর্তী হয়েও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে উপজেলা তিনটি। তবে, খুলনা মহানগরীর পার্শ্ববর্তী হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে ঐ তিনটি উপজেলার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পিছিয়ে থাকা উক্ত তিনটি উপজেলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব বিবেচনা করে কেডিএ খুলনা মহানগরীর সঙ্গে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এজন্য ২০০২ সালের মাস্টারপ্ল্যানে ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার মহাসড়কসহ ভৈরব, আতাই ও আঠারবাঁকী নদীর ওপর তিনটি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় কেডিএ। তবে নানা কারণে এতদিন এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রকল্পটির কাগজপত্র অনুমোদন করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। চার বছর মেয়াদের এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। কেডিএর সূত্রমতে, রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলার ভৈরব, আতাই ও আঠারবাঁকী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণসহ ২৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ হলে খুলনা মহানগরীর পাশ দিয়ে বিকল্প আরেকটি যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। ফলে খুলনা মহানগরীর ওপর মানুষের চাপ বহুলাংশে কমে যাবে। এছাড়া ছোট-বড় শিল্প-কলকারখানাসহ বহু শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে ঐ তিনটি উপজেলায়। এতে নতুন কর্মসংস্থানসহ বেকার সমস্যার সমাধান হবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ও কেডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মোরতোজা আল মামুন বলেন, ভৈরব, আতাই ও আঠারবাঁকী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ হলে রূপসা, দিঘলিয়া ও তেরখাদা উপজেলার সঙ্গে খুলনা মহানগরীর সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ওখানে চার লেন রাস্তা আর দুই পাশে হালকা যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ এই প্রকল্পে ছয় লেনের রাস্তার ব্যবস্থা করে মোংলা মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যাপারে কেডিএর প্রধান প্রকৌশলী মো. সাবিরুল আলম বলেন, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহর নদীর পূর্ব পাশে চলে যাবে। তখন খুলনা শহর দ্রুত সম্প্রসারিত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার কারণে ওখানে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে।