বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যতই নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হোক, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সর্বকালের নজিরবিহীন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সব বাধা অতিক্রম করে এই গণসমাবেশে উপস্থিত হতে সংগ্রামী জনগণ আপসহীন লক্ষ্যে স্থির।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা মহানগরসহ দেশব্যাপী বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আসামি করা, গ্রেপ্তার, হয়রানি, দিনে-রাতে বাসায় পুলিশ হানা দিয়ে পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে অশালীনভাবে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের উত্থানের ফলে ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ, সুশাসন, স্বচ্ছতা, সহনশীলতাকে অচেনা শব্দে পরিণত করা হয়েছে। অসম্মান করা হয়েছে মানুষের ভোটাধিকারকে। অবাধ, মুক্ত, স্বচ্ছ, ইনক্লুসিভ নির্বাচনকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে বর্তমানে জনগণের বিপুল উত্থান দেখে অবৈধ সরকার দিশেহারা হয়ে প্রতিহিংসার বন্য আচরণ শুরু করেছে। বিরোধী দলের টুঁটি চেপে ধরার জন্য এরা রাষ্ট্রশক্তিতে নির্বিচারে ব্যবহার করছে।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রস্তুত থাকবে। বিএনপি তো গণসমাবেশ করবে, আর গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতিটাই একটি রাজনৈতিক দলের বড় অর্জন। সুতরাং সমাবেশকে সফল করতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য, সেটি রক্ষার জন্য একটি রাজনৈতিক দল সর্বাত্মক উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নেবে। এখানে তো সংঘাতের কোনো প্রশ্নই আসে না। হাছান মাহমুদের এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর মনের ইচ্ছার হুবহু প্রতিধ্বনি। গণসমাবেশকে নিয়ে মন্ত্রী তার দল ও সরকারের সর্বনাশা ইচ্ছারই পরিকীর্তন করছেন। তবে আওয়ামী সরকার তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে।
রিজভী বলেন, জনগণের বিশাল শক্তির কাছে চক্রান্তের কোনো আস্ফালন টিকতে পারবে না। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন বিভাগীয় সদরে বিএনপির গণসমাবেশে নানা ধরনের নরকীয় আক্রমন সত্ত্বেও জনগণের অপ্রতিরোধ্য গতিকে আটকাতে পারেনি। তারা বহু কষ্ট করে দুই-তিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছেন। আওয়ামী সরকার সন্ত্রাসবাদের অন্ধগলিতে নিজেদের রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। কারণ এরা সুশাসন ও গণতন্ত্রকে সমাধিস্থ করেছে। তবে জনগণ বর্তমান আওয়ামী সরকারের পতনে উদ্দীপ্ত বদ্ধপরিকর। ভোটারবিহীন সরকার বন্দুক ও গুলি করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হত্যার ধারাবাহিকতায় বাতাসে বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে দিলেও জনগণের রাজপথের উপস্থিতিকে থামাতে পারবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রকামী বিএনপির নেতা-কর্মীরা শান্তিকামী কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তারা অবিচল। রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করেও তাদের কণ্ঠের উচ্চারণকে থামানো যাবে না। শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে দমাতে হত্যার যে নীতি অবলম্বন করেছেন তাতে তিনি সফলকাম হবেন না। তার আমলে একের পর এক নিরপরাধ লোককে হত্যার কোনো বিচার হয়নি। তাই আওয়ামী দুর্বৃত্তরা সহিংস কার্যাবলী চালাতে উৎসাহিত হয়েছেন। প্রতি দুই দিন, তিন দিন পরই বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও অতর্কিত হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করছে, পঙ্গু হয়েছে অনেক নেতা-কর্মী, এর উপর চলছে দেশব্যাপী বেপরোয়া পুলিশি অভিযান, হামলা-মামলার হিড়িক। এসবই রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তির ইশারাতেই হচ্ছে। কারণ একসময় তিনি চট্টগ্রামে বলেছিলেন, একটির বদলে ১০টি লাশ ফেলতে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে পুলিশ।
নবচেতনা /এমএআর